বাংলা উপন্যাসের ইতিহাস ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে শুরু। তবে উপন্যাস দ্রুত বাংলা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখায় পরিণত হয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দুর্গেশনন্দিনী বাংলা ভাষার প্রথম উপন্যাস হিসেবে ধরা হয়। পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, মানিক থেকে হুমায়ূন আহমেদ পর্যন্ত উপন্যাসের বিষয়-বৈচিত্র্য, ভাষা-আঙ্গিকের মধ্যে এসেছে নানা পরিবর্তন। ঘটনা বা কাহিনির বাইরেও বাংলা উপন্যাসের গঠনগত দিক নিয়ে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ঔপন্যাসিকদের মধ্যে রয়েছে নানা পরীক্ষা নীরিক্ষা। হাসেম আলীর স্বপ্নভঙ্গ মাসুদ চাকলার প্রথম উপন্যাস। জীবন অভিজ্ঞতা আর আত্মমৈথুনের মধ্য দিয়ে এ উপন্যাসকে নির্মাণ করেছেন তিনি। হাসেম আলী অবিবাহিত এক মধ্যবয়স্ক মানুষ। তার জীবনের ছোট ছোট ঘটনা, ব্যর্থতা, হাসি, কান্না এ উপন্যাসের বিষয়বস্তু। বাস্তবতার সাথে মানুষের যে মনের পরিবর্তন ঘটে তা অত্যন্ত নিপুণ ও সূ²ভাবে তুলে ধরেছেন ঔপন্যাসিক। স্বপ্নের যে বৈজ্ঞানিক ও কাল্পনিক ব্যাখা রয়েছে তার দিকে না গিয়ে হাসেম আলীকে অন্যভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন ঔপন্যাসিক। লাবণ্যের সাথে হাসেমের বন্ধুত্ব কিন্তু কেন প্রেম নয়? কেন বিয়ে নয়? মপা পাগল সত্যিকারে মানসিক রোগী কিন্তু সমাজে, রাষ্ট্রে এমন মপা পাগল কী নেই? রিপা ভাবি, বস কিংবা কাজের বুয়া কেউই হাসেম আলীর পর্যবেক্ষণের বাইরে না। সবার মধ্য থেকেও সে উদাসী! সংসারে থেকেও সন্ন্যাসী! মানব দরদী, নিসঙ্গ আর আত্মভোলা হাসেম নিজের স্বপ্ন পূরণ না করতে পারলেও, অন্যের স্বপ্ন পূরণে স্বচেষ্ট। এ উপন্যাসে হাসেম আলীকে আরও নানারূপে আবিস্কার করা যাবে। একটি ভালো উপন্যাস পাঠের নিশ্চয়তা নিয়ে পাঠ শুরু করা যেতে পারে। বাংলা উপন্যাসের ইতিহাসে এটি নতুন মাত্রা যুক্ত করবে।
মাসুদ চাকলা লেখক নাম হলেও প্রকৃত নাম মো. মাসুদুর রহমান চাকলা। পিতা মরহুম মো. মজিবুর রহমান, মাতা মোসা. আলকাজ বেগম। পৈত্রিক বাড়ি বরিশাল শহরের পশ্চিম কাউনিয়ায়। পিতার সরকারি চাকরির সুবাদে খুলনা, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। বড় ভাই মো. মশিউর রহমান রেডিয়াস ইনস্পেকশন সার্ভিসেস লিমিটেড (সার্ভে কোম্পানি)-এর এমডি। ছোট ভাই বরিশাল সদর উপজেলার জনপ্রিয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মধু। একমাত্র বোন নাইলা শারমিন চায়না— গৃহিনী। স্ত্রী ইশরাত জাহান বেবী বরিশালের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তার দুই সন্তান- নাম মো. মাশরুর রহমান ইশরাক ও কন্যা মাশরুবা রহমান ইলমী। ১৯৮৮ সালে বরগুনা জেলা স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। ঢাকা কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট এবং বরিশাল বিএম কলেজ থেকে এমএ পাস করেন। বর্তমানে তিনি রেডিয়াস ইনস্পেকশন সার্ভিসেস লিমিটেড, ঢাকাতে ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি নাটকেও অভিনয় করছেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটক এক জনমে, পরিবিবি, ভিলেজ হট্টগোল, লাগ ভেলকি লাগ ইত্যাদি। তার প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ কীর্তণখোলার বাঁকে-২০২১ সালে প্রকাশিত হয়। হাসেম আলীর স্বপ্নভঙ্গ তার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস।