আমার এই প্রবন্ধ সংগ্রহটি প্রকৃতপক্ষে কেবল প্রবন্ধের সংকলন নয়। এর সাথে যুক্ত করে দিতে হয়েছে বিভিন্ন সময়ে রচিত বেশ কয়েকটি নির্বাচিত কলাম। এছাড়া দু'টি ভ্রমণবৃত্তান্তও ৷ কলাম ও ভ্রমণ নিয়ে আলাদা পুস্তক প্রকাশের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বিষয়বস্তুর মূল্যতার কথা বিবেচনা করে আলাদা বই প্রকাশের বাসনাকেও আপাতত স্তিমিত রাখতে হয়েছে। দুনিয়ার বহু বিচিত্র দেশ ও মহানগরীতে পরিভ্রমণের দুর্লভ সুযোগ আমি পেলেও আলস্যের দরুণ ঐসব সফরের বিবরণ আমি বলতে পারিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের অনেকগুলো শহর আমি ঘুরে বেড়িয়েছি, কিন্তু এর বিবরণ তাৎক্ষণিকভাবে ডায়েরীতে লিখে রাখা সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে এসব ভ্রমণকাহিনী স্মৃতি থেকে লেখার ইচ্ছা রাখি। কলামসমূহের বেশ কয়েকটি পত্র পত্রিকায় স্বনামে বেনামে একদা প্রকাশ পেয়েছিল। তখন যেসব কলামে দেশের সাহিত্য সংস্কৃতিকেই প্রাধান্য দিয়েছিলাম— এই সংকলনে সেগুলোই স্থান পেয়েছে। নারী নিগ্রহ শিরোনামে মুসলিম নারী সমাজের ওপর একটি ক্ষুদ্র পুস্তিকা একদা প্রকাশিত হলে বইটি নিয়ে বাংলাদেশের মহিলা মহলে বেশ আলোচনার সূত্রপাত হয়েছিল, এই সমগ্রে নারীনিগ্রহের প্রবন্ধসমূহ অন্তর্ভূক্ত হল। আমার একটি ব্যক্তিগত প্রবন্ধের বই ও একটি সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধের সংগ্রহ এই সময়ের অন্তর্ভুক্ত করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু কপিরাইটজনিত অসুবিধার কারণে তা সম্ভব হল না। প্রবন্ধ সমগ্রের দ্বিতীয় খণ্ডে ঐ দু'টি বই অন্তর্ভুক্ত হবে। ততদিনে কপিরাইটজনিত সমস্যারও সমাধান হয়ে যাবে আশা করি। তাছাড়াও নানা পত্রপত্রিকায় আমার অনেক প্রবন্ধ-নিবন্ধই ছড়িয়ে আছে যা এই মুহূর্তে হাতের কাছে না থাকায় নেয়া গেল না। দ্বিতীয় খণ্ডে সৈসব দেয়ার চেষ্টা করব।
বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবিদের একজন আল মাহমুদের কবিতার বই পড়েননি এমন সাহিত্যপ্রেমী খুঁজে পাওয়া ভার। গুণী এই কবি একাধারে একজন সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে তার কবি পরিচয়। আধুনিক বাংলা কবিতা নানা দিক থেকে তার কাছে ঋণী থাকবে। বাচনভঙ্গি আর রচনাশৈলীতে তার কবিতা সমকালীন যেকোনো কবির তুলনায় অনন্য। ‘কবিতাসমগ্র’ (দুই খন্ড) ‘উড়ালকাব্য’, ‘সোনালি কাবিন’, ‘আল মাহমুদের স্বাধীনতার কবিতা’, ‘প্রেমের কবিতা সমগ্র’, ‘আল মাহমুদের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ ইত্যাদি কবিতার বই নিয়ে আল মাহমুদ কবিতাসমগ্র। এছাড়াও আল মাহমুদ উপন্যাস সমগ্র প্রকাশিত হয়েছে তিন খণ্ডে। জাতীয় রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক টানাপোড়েন, স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমি ও প্রেক্ষাপটসহ সমাজ ও ব্যক্তি জীবনের দ্বন্দ্ব স্থান পেয়েছে আল মাহমুদ এর বই সমূহ-তে। ‘কালের কলম’, ‘লোক লোকান্তর’, ‘মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো’, ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’, ‘আরব্য রজনীর রাজহাঁস’, ‘গল্প সমগ্র’, ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য লেখা। আল মাহমুদের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে। তার পুরো নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। শিক্ষাজীবনেই তিনি লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত হন। রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল আর মধ্যযুগের বৈষ্ণব পদাবলী পাঠ করতে করতে নিজের কবি প্রতিভা আবিষ্কার করেন তিনি। ১৯৫৪ সালে সাপ্তাহিক কাফেলা পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। কিছুকাল পরই এ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। পুরো ৬০-এর দশক জুড়ে তিনি অসংখ্য কবিতা রচনা করেন এবং কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও খ্যাতি লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি প্রবাসী সরকারের হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ পত্রিকায় সরকার বিরোধী লেখালেখির কারণে এক বছরের জন্য কারাদণ্ডও ভোগ করতে হয় তাকে। ১৯৭৫-৯৩ সাল পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে কাজ করে কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কবি আল মাহমুদ তার অনবদ্য রচনাশৈলীর জন্য ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’, ‘একুশে পদক’, ‘জীবনানন্দ স্মৃতি পুরস্কার’, ‘নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক’ সহ অসংখ্য পদক ও সম্মাননা লাভ করেছেন। ২০১৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি তিনি পরলোকগমন করেন।