"ঝান্সীর রাণী" বই এর ভিতরের লেখা ইংরাজ ইতিহাস লেখকগণ ঝান্সীর রাণী বীরাঙ্গনা লক্ষ্মীবাই-র চরিত্র অনর্থক কলঙ্কিত করিয়া রাখিয়াছেন। তাঁহারা বলেন ঝান্সীর হত্যাকাণ্ড রাণীর আদেশানুসারে হয়। কিন্তু ঝান্সীর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যে রাণীর সংশ্রব ছিল, তাহার কিঞ্চিন্মাত্রও প্রমাণ নাই। রাণী লক্ষ্মীবাই-র ন্যায় বীরাঙ্গনা ইংলণ্ডে কিম্বা আমেরিকাতে জন্মগ্রহণ করিলে, প্রত্যেক লোক আপন আপন গৃহে যত্ন সহকারে তাঁহার প্রতিমূর্ত্তি রাখিতেন। কিন্তু ভারতবর্ষের লোক এখন পর্যন্তও রাণী লক্ষ্মীবাই-র গুণ গ্রহণ করিতে সমর্থ হয়েন নাই ৷ ঝান্সীর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে লক্ষ্মীবাই-র সংশ্রব থাকিলে আমরাও তাঁহাকে পিশাচিনী বলিয়া ঘৃণা করিতাম। কিন্তু লক্ষ্মীবাই-র চরিত্র সম্বন্ধে ইংরাজ ইতিহাস লেখকগণ নিশ্চয়ই ভ্রমে নিপতিত হইয়াছেন। কেবল লক্ষ্মীবাই-র সম্বন্ধে কেন? হোলকারের সম্বন্ধেও ইংরাজদিগের এই প্রকার ভুল হইয়াছিল। হোলকার ইংরাজদিগের সাহায্য করিবার নিমিত্ত নিজের প্রাণ পর্য্যন্ত বিসর্জ্জন করিতে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু ইংরাজরা তথাপি সিপাহী বিদ্রোহের পনের-ষোল বৎসর পরেও তাহাকে সন্দেহ করিতে লাগিলেন। ১৮৭৪ খৃষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে ইন্দোরের বিদ্রোহী সাদাত খাঁর ফাঁসি হইলে পর, ইংরাজি সংবাদপত্রে লিখিত হইল—‘The rebel had confessed at the last moment that he had been instigated and set on by Holkar's Durbar.' যখন হোলকারের সম্বন্ধে ইংরাজদিগের ঈদৃশ ভ্রম হইয়াছিল, তখন রাণী লক্ষ্মীবাই-র সম্বন্ধে ভ্রম হইবার বিশেষ কারণ রহিয়াছে। লক্ষ্মীবাই-র চরিত্রের এই বৃথা কলঙ্ক নিরাকরণার্থ ঝান্সী বিদ্রোহের প্রকৃত ঘটনা অবলম্বনপূর্ব্বক এই পুস্তক লিখিত হইয়াছে । পুস্তকখানি উপন্যাসাকারে লিখিত হইলেও ঐতিহাসিক বিবরণ অবিকৃত রহিয়াছে।