ভূমিকা নিজেকে 'কবি'র তকমায় ভূষিত করতে কিংবা নিজের এলোমেলো দিনরাত আর যাপনকে কবিতা বলে অলংকৃত করতে আমার সংকোচ হয়। এ সংকোচ কবে কীভাবে, ঠিক কততম বইয়ের পৃষ্ঠায় গিয়ে কাটবে, তা আমি জানি না। এই সময়ে শুধু এইটুকু জানি, এটি আমার প্রথম বই। এ বইয়ে থাকা পদ্যসম লেখাগুলো কখনো আবছায়া ফুটপাতে, কখনো ভাঙা পায়ের অসহায়ত্বে, কখনো অত্যধিক মিষ্টি চায়ের কাপে উড়ে উড়ে মার কা এসেছে। তাদের আমি দু বাহু এগিয়ে দিয়ে গ্রহণ করেছি। সুযোগ পেলে মণিমুক্তোর মতো সেঁচে নিয়েছি কাগজের বুকে, কলমের খোঁচায়। কোনো কোনো লেখা আজ পর্যন্ত প্রিয় রয়ে গেছে, কোনোটি জন্ম নেবার পর প্রতিক্ষণে শুধু প্রসববেদনার কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে, কোনোটির কথাবা আমার মনেও নেই – রয়ে গেছে অবহেলার আবডালে। তবে এই সবগুলো লেখা যে আমার ভঙ্গুর সময়ের চেহারা নিয়ে ভীষণ স্পষ্টতা দাবি করে, তাতে কোনো দ্বিধা নেই আমার। কবিটা হোক কিংবা না হোক, শহরে রাস্তার ঘুম ভেঙে যাওয়া নিদারুণ ক্যাকোফোনি'ই সই। ক্যাকোফোনি শব্দটা আদতে বোঝায় কর্কশতা, কিন্তু আমার জন্য তা স্মৃতিময় সময়ের এপিটাফ। হয়তো ঘনিষ্ঠ আড্ডায় মুহূর্তের রাগালাপ, বন্ধুর চোখে দেখা সঙ্গের আচ্ছন্নতার, হয়তো একক সুরে গেয়ে ফেলার মেলোডির চেয়েও এই ক্যাকোফোনি হতে পারে অনেক বেশি কাছের।
অনিন্দিতা চৌধুরী ১৯৯৭ সালের ২রা মার্চ সিলেটে জন্ম নিয়েছিলেন। বাবা-মা দু’জনেই অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী। বড় দুই বোনের সাথে বয়সের ব্যবধান অনেকটা হওয়ায় সবার স্নেহের আতিশয্যেই যেন বেড়ে ওঠেন তিনি। তার এই বেড়ে ওঠার দিনগুলো ভাগ হয়েছে সিলেট বিভাগেরই দুই প্রান্তের দুটো থানা, বড়লেখা আর শ্রীমঙ্গলে। শেষমেশ চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ২০১৬ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। এ বিভাগ থেকে সদ্যই স্নাতক সম্পন্ন করলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই অনলাইন কনটেন্ট প্ল্যাটফর্মে লেখক ও সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। লেখালেখিটাকে পেশা ও নেশা দুই হিসেবেই দেখতে চান। এই লেখকের ছোট্ট মেস ঘরের নিজের বইয়ের তাকটি ভর্তি থাকে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নন-ফিকশন ইত্যাদি প্রায় সব ঘরানার বইই। কবিতার প্রতি এক অন্যরকম পক্ষপাতিত্ব বোধ করেন বলেই হয়তো তার প্রথম প্রকাশিত বইটি কবিতার। অপ্রকাশিত কিছু ছোট গল্প ও দুটো অসমাপ্ত উপন্যাস রয়েছে তার। আপাতত চাকরিবাকরি ছেড়ে দিয়ে বসে আছেন, নিজের আলসে ভাবটা কাটিয়ে দ্রুত কলমটাকে ছোটাতে চান দারুণ বেগে।