বিংশ শতাব্দীর দার্শনিক সরদার ফজলুল করিম (১৯২৫-২০১৪) বাংলাদেশের প্লেটো হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। পাশ্চাত্য দর্শনের চিরায়ত কয়েকটি গ্রন্থ তিনি বাংলা ভাষায় রূপান্তরের সাহায্যে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ করেছেন। রাজনীতিবিদ এবং শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে তিনি জীবনকে দেখেছেন। দুর্ভিক্ষ, মহামারি, উদ্বাস্তু মানুষের অসহায়ত্ব সরদারের হৃদয় স্পর্শ করেছে। ক্ষমতাহীন মানুষের ক্ষমতায়নে তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। সহজ-সরল সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত কিন্তু তাঁর ভেতরটা ছিলো দার্শনিকসুলভ পাণ্ডিত্যে ভরা। জ্ঞানবিদ্যা, অধিবিদ্যা এবং মূল্যবিদ্যা সরদারের দর্শনচিন্তায় স্থান পেয়েছে। তাঁর দর্শনচিন্তার মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের সমস্যার সমাধানের রূপরেখা স্পষ্ট। মার্কসবাদে আস্থাশীল সরদার মনে করতেন, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হবেই। তিনি ছিলেন ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার পক্ষে। সরদার ফজলুল করিম মনে করতেন জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে শ্রমজীবী মানুষ শোষণহীন সমাজ নির্মাণ করবে। জ্ঞানের সাহায্যেই মানুষ আত্মমর্যাদা লাভ করে। নিজেকে যে জানে সে মানুষই আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানুষে পরিণত হয়। আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানুষ নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকে। বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ শ্রেণীহীন শোষণহীন সমাজ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। জ্ঞান ছাড়া বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ হওয়া যায় না।