বাংলাদেশের কবিতায় কবি অসীম সাহা এখন আর শুধু একটি নাম নয়, একজন কবি-শিল্পীর প্রতিকৃতি। সাহিত্যের সবগুলো শাখায় সমান দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে বিগত ৫৪ বছর ধরে তাঁর যে শৈল্পিক অভিযাত্রা, সেখান থেকে তিনি তিল পরিমাণও বিচ্যুত হননি। তাই তাঁর সৃষ্টিশীলতায় যে বৈচিত্র্য, তাকে এককথায় বলা যেতে পারে অভিনব। বিশেষত কবিতায় তাঁর ক্রমপরিণতি এবং প্রাচ্য ও প্রতীচ্যে বিস্ময়কর পর্যটন তাঁর কবিতাকে দিয়েছে একটি স্বতন্ত্র মাত্রা। তাই তাঁর কবিতা গভীর, ব্যঞ্জনাময় এবং দার্শনিক ঋদ্ধতায় বহুমাত্রিক। একই সঙ্গে বাংলা কবিতার যে মৌলিক গতিপ্রবাহ—তার গীতিধর্মিতা, অসীম সাহার কবিতায় সেই ঐতিহ্য তাঁকে করে তুলেছে তারই মৌলিক প্রপঞ্চের অনুসারী। অসীম সাহার সবগুলো কবিতার বই থেকে বাছাই করা সেরা কবিতাগুলো নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে ‘অসীম সাহার শ্রেষ্ঠ কবিতা'র কোলকাতা-সংস্করণ। তাতে পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের পাঠকরাও সেই মৌলিকতার সঙ্গে সঙ্গে কবিতার গভীরতর তলদেশ স্পর্শ করতে সক্ষম হবেন এবং তাঁর দীর্ঘদিন ধরে রচিত কবিতার এক অনবদ্য সংকলন হিসেবে এটি তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষম হবে, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
কবি অসীম সাহার জন্ম নেত্রকোনা শহরের মামাবাড়িতে। তার বাবা প্রয়াত অখিল বন্ধু সাহা, মা প্রয়াত প্রভা রানী সাহা। ছয় ভাই-বােনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তাঁর পিতপুরুষের ভিটে মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানার তেওতা গ্রামে। তবে দার্শনিক পিতার চাকরির সূত্রে মাদারীপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু। সেখানেই বিদ্যালয়, উচ্চবিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করে ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। অসীম সাহার লেখালেখি-জীবনের শুরু ১৯৬৪ সালে। ১৯৬৫ সালে জাতীয় দৈনিকে লেখা ছাপার মধ্য দিয়ে আজ পর্যন্ত অব্যাহতভাবে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছড়া, কিশাের কবিতা প্রভৃতি লিখে চলেছেন। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৩৫টি । লেখালেখির পাশাপশি বিগত আটচল্লিশ বছর ধরে তিনি দেশের মূলধারার পত্রিকাসমূহে সাংবাদিকতাও করে আসছেন। শিল্পের সাধনায় নিবেদিতপ্রাণ এই কবি-শিল্পী এ-পর্যন্ত বাংলা একাডেমি সাহিত্যপুরস্কার, আলাওল সাহিত্যপুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পুরস্কার, রূপসী বাংলা পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ), কোলকাতা আন্তর্জাতিক লিটল ম্যাগাজিন পুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার এবং আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্যপুরস্কার, বঙ্গবন্ধু স্মারক-পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। এছাড়াও তিনি চলচ্চিত্রে গীতিকার, সুরকার, অভিনেতা ও টিভি চ্যানেলের উপস্থাপক হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক।