চতুর্থ শতাব্দী থেকে ১৯৭০ সন পর্যন্ত বাঙারি জাতি ছিল। পরাধীন। চিরকালই বাঙালি জাতি বহিরাগত শাসকদের দ্বারা শাসিত, শোষিত ও নির্যাতিত হয়ে এসেছে। প্রাচীন যুগে গুপ্ত, বর্মণ ও সেন রাজবংশের অধীনে, মধ্যযুগে তুর্কি, পাঠান ও মোগল শাসকদের অধীনে এবং আধুনিক যুগে ইংরেজ ও পাঞ্জাবিদের অধীনে বাঙালি ছিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে পরাধীন। ১৯০৫ সালে স্বদেশি আন্দোলন থেকেই বাঙালি জাতীয়তার চেতনা জন্ম নেয়। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ এবং শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুর হকের নেতৃত্বে প্রথম বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হয়। পরে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানি, হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দি এবং নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এই আন্দোলনে যোগ দেন। তারা বাঙালিদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগিয়ে দিয়েছিলেন সত্য, কিন্তু তাঁরা দেশের সর্বস্তরের বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করে বাঙালি জাতিকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিতে পারেন নি। তাঁদের সুযোগ্য উত্তরসূরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁদের সংগ্রামের পথ অনুসরণ করে ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণিপেশা নির্বিশেষে গ্রাম শহরের সকল স্তরের বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করে ১৯৭১ সালে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। এই স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে জীবনের মূল্যবান ১২টি বছর জেলখানায় কাটাতে হয়েছে। ১৮ বার কারাগারে বন্দি হতে হয়েছে। ২৪টি ফৌজদারি মামলা লড়তে হয়েছে এবং দু'বার ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়াতে হয়েছে। এত জেল, জুলুম ও নির্যাতন ভোগ করেও বঙ্গবন্ধু তাঁর সংকল্প থেকে এক চুলও নড়েন নি। তাঁর অকুতোভয়, দুঃসাহসী ও হিমালয়তুল্য অটল নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ স্বাধীন হতে পেরেছে। বঙ্গবন্ধু একজন দৃঢ়চেতা ও নিষ্ঠাবান কর্মীবাহিনী তৈরি করতে পেরেছিলেন। যাঁরা তাঁর অবর্তমানে সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে বিশাল সাহসী মুক্তিবাহিনী গড়ে তুলে সংগ্রাম করে স্বাধীনতা এনেছিলেন। কয়েকটি ববন্ধু রাষ্ট্রও মুক্তিযুদ্ধেকে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়েছিলেন। দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা ও সংগ্রামী প্রতিষ্ঠানের বিবরণ স্থান পেয়েছে বইটিতে।
শিক্ষাজীবন: মোহাম্মদ আবদুর রহিম ১৯৫০ সনে বরিশাল জেলার সায়েস্তাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সনে তিনি কোলচর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পেয়ে পাশ করেন। ১৯৬৯ সনে তিনি সায়েস্তাবাদ হাইস্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৭১ সনে তিনি বরিশাল সরকারি বিএম কলেজ থেকে ২য় বিভাগে আইএসসি পাশ করেন। ১৯৭৪ সনে তিনি বরিশাল সরকারি বিএম কলেজের বাংলা বিভাগ থেকে ২য় শ্রেণীতে বিএ অনার্স এবং ১৯৭৫ সনে ২য় শ্রেণীতে এমএ পাশ করেন। কর্মজীবন : তিনি ১৯৭৮ সনে আরজি কালিকাপুর হাইস্কুলে এবং ১৯৭৯ থেকে ১৯৮১ সন পর্যন্ত বাবুগঞ্জ উপজেলার বাকুদিয়া কলেজে শিক্ষকতা করেন। তারপর পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পরীক্ষা দিয়ে তিনি ১৯৮১ সনের অক্টোবর মাসে সরকারি বরগুণা কলেজে যোগদান করেন। ১৯৮২ সনের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি বরিশাল সরকারি বিএম কলেজে বদলি হন। বরিশাল বিএম কলেজে তিনি প্রায় ২৬ বছর অধ্যাপনা করেন। পদোন্নতি ও বদলি জনিত কারণে তিনি বরিশাল সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ এবং পটুয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজে কিছুদিন অধ্যাপনা করেছেন। ২০০৭ সনে পদোন্নতি পেয়ে তিনি গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজে অধ্যাপক পদে যোগ দেন। ২০০৮ সনে তাঁকে কাশিয়ানী উপজেলার রামদিয়া সরকারি কলেজে অধ্যক্ষের পদে বদলি করা হয়। ২০০৯ সনের শেষের দিকে তিনি ঢাকার বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে বদরি হয়ে সেখান থেকে অবসর গ্রহণ করেন। প্রকাশনা : ২০০৯ সনে কবি নজরুল ও কবি জসীমউদদীন নামে তাঁর দুটি বই প্রকাশিত হয়।