নদী মানেই তো জোয়ারভাটা। তেমনই জীবন মানে এক অদ্ভুত টানাপোড়েনের মিশেল। অপরূপা ‘লাবণ্য’ শুধুমাত্র, যে কাউকে ঝলসে দিতে পারে এমন একটা সুন্দর অবয়ব নিয়েই পৃথিবীতে এসেছে। আর কিচ্ছু না। পৃথিবীতে আসার দিনেই এক আকাশ বিষণ্ণতা নামিয়ে এনেছে। ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় মা চলে গিয়েছে ওপারে! আর বাবা তো ও’কে মায়ের পেটে রেখে কোথায় যে পালিয়েছে আজও তার খোঁজ নেই! সাদামাটা স্বর্গীয় একটা গ্রামেই জন্ম হয়েছে লাবণ্য’র, কিন্তু বড় হয়েছে মামার বাড়িতে অবহেলায়,উত্তাপে। তবে মামার মায়ার দাক্ষিণ্যে শিক্ষিত হয়ে ঢাকায় আসে বিষন্ন জীবনের রূপরেখা বদলাতে। মহাকাশ সাক্ষী এই ইট পাথরের শহরে এসে আমানুষ কিছু কাপুরুষের পোশাক খোলার এক হিংস্র খেলার বলি হয়ে জীবনের নেমে আসে ভয়াল কালরাত্রি। ডানা কাটা পাখিকে আর কে’ই বা আপন করে নেবে? তখন’ই তার জীবনে দেবদূতের মতো উদয় হয় শ্রাবণ চৌধুরী নামে এক বিত্তবান যুবকের। সব জেনে শুনেই লাবণ্যকে সে আপন করে নিয়েছে। এমন একজনের জন্যই তো আজন্ম কাতর ছিল সে। শুরু হয় নতুন জীবন। শহরের ছোট্ট একটা চিলেকোঠায় সংসার পেতে বসে। সুসজ্জিত অট্টালিকায় থাকা শ্রাবণ কি সুন্দর করে মানিয়ে নিয়েছে মধ্যবিত্ত জীবন। কি নিখুঁত অভিনয় সে করছে ,লাবণ্য টের’ই পাচ্ছে না তার পরিচয়। অপরাধের এই নগরে হঠাৎ একের পর খুন হতে থাকে,তারাই খুন হচ্ছে যারা লাবণ্য’র সাথে ঘটে যাওয়া অপরাধের সাথে জড়িত ছিল। তারা সবাই এই শহরের রাঘব বোয়াল হওয়া স্বত্তেও খুনিকে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। রহস্য ক্রমেই জট পাকাতে থাকে। পুলিশও দুটো খুন নিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে কারণ খুনি এতো নিখুঁতভাবে কাজগুলো সেরেছে যে কোনো প্রমাণ’ই মেলে নি। তাহলে কে করছে খুনগুলো? এই প্রশ্নের সন্ধান করতে করতে বেরিয়ে আসছে শহরে ঘটে যাওয়া একের পর এক অপরাধের চিত্র। এই নগরে অপরাধ করতে কেউ ভয় পায় না! অপরাধের অভয়ারণ্য এই নগর। আচ্ছা সব মৃত দেহ কি পানিতে ভেসে উঠে? নাকি বোকা পৃথিবী এসব লাশ ইচ্ছে করেই লুকিয়ে রাখে যেমন করে মানুষ ভেতরের ক্ষত লুকোয়? জীবনটা সত্যিই অমিমাংসিত এক সমীকরণ। অভয়নগর’ও কি তেমন’ই?