১৬১২ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে খাগড়াঘাটের যুদ্ধে মুঘল বাহিনীর হাতে রাজা প্রতাপাদিত্য পরাজিত হন। তাঁর পরাজয়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় যশোহর রাজ্য। এরই একটা অংশ হয়, কুমার নদের তীরে দাঁড়িয়ে থাকা মোহাম্মদশাহী পরগনা। এরপর কেটে যায় ঠিক ষোলোটা বছর। ১৬২৮ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে মুঘল সাম্রাজ্যের তখ্তে বসেন নতুন সম্রাট। সম্রাট শাহাব উদ্-দীন মুহাম্মদ খুররম শাহ্জাহান। নতুন সম্রাটকে ঘিরে তৈরি হয় এলোমেলো পরিস্থিতি। একের পর এক হতে থাকে আঞ্চলিক বিদ্রোহ। সাথে যোগ হয়, দক্ষিণাত্যের ভয়াবহ খরা ও দুর্ভিক্ষ। বলা হয়, সেবার দুর্ভিক্ষে মারা গিয়েছিল প্রায় সাত লক্ষ ক্ষুধার্ত মানুষ। সম্রাট শাহ্জাহান দক্ষিণাত্যের অঞ্চলগুলোতে তৎকালীন প্রায় বারো লক্ষ টাকার কর মওকুফ করেছিলেন। খুলেছিলেন অগণিত লঙ্গরখানা। ওদিকে আবার পর্তুগিজ জলদস্যুরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আরাকান আর বাংলার উপকূলীয় অঞ্চল হয়ে ভেতরে ঢুকে জাহাঙ্গীর নগর, নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলেও লুটতরাজ চালিয়ে বেড়াচ্ছে। হুগলিতে তাদের ঘাঁটি দিন দিন শক্ত হচ্ছে। স্থানীয়দের অত্যাচার করছে, অস্ত্রের মুখে ধর্মান্তরিত করছে। এসব সামাল দিতেই সম্রাটের যখন নাজেহাল অবস্থা তখন ১৬৩১ সালের আগস্টে চৌদ্দতম সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা গেলেন তাঁর প্রিয় স্ত্রী সম্রাজ্ঞী মুমতাজ মহল। সম্রাট শাহ্জাহান যখন এতসব বিপর্যয় একা হাতে সামাল দিচ্ছেন, তখন মোহাম্মদশাহী পরগনার এক করদ রাজা, হরিহর চন্দ্র রায় পরিস্থিতির কারণে আঞ্চলিক বিদ্রোহ করে বসলেন। মুঘল রাজকোষে তাঁর পক্ষে বর্ধিত খাজনা জমা দেওয়া সম্ভব না। গাঙের জলে ভেসে আসা আফগানি পাঠান মাসুদ খাঁ-র রহস্যটা কোথায়? রাজা হরিহরের একমাত্র কন্যা শৈলবালা জাত পাত ভুলে প্রেমে পড়েছে এই সুদর্শন যুবকের। মাসুদ খাঁ-ও রাজকুমারী শৈলবালাকে মন দিয়ে বসে আছে। এই অসম প্রেমের পরিণতি কী হবে? আবার, মুঘল সম্রাটের দক্ষ ও বিশাল সেনাবাহিনীর সাথে রাজা হরিহরের ছোট্টো বাহিনীর যুদ্ধও অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে। গুরুদায়িত্ব গিয়ে বর্তালো বাংলার সুবাদার কাসিম খান জুইনির কাঁধে। তারপর? ইতিহাস আর লোককাহিনী আশ্রিত এই উপন্যাসে ধরতে চেষ্টা করা হয়েছে ইতিহাসের পাতা থেকে হারাতে বসা, শৈলকূপা অঞ্চলে মানুষের মুখে মুখে বেঁচে থাকা অসামান্য এক উপাখ্যানকে। যে উপাখ্যানে রাজা আছেন, রানী আছেন। আছে রাজকুমারী আর ভিনদেশি এক ডালিম কুমার। যেখানে আছে রাজনীতি, আছে প্রেম, আছে ষড়যন্ত্র, আছে যুদ্ধ। আর আছে, তখনকার সাধারণ মানুষদের ছেটো ছোটো সুখ দুঃখের গল্প। সমাজের গল্প। কখনো আগ্রা, কখনো বুরহানপুর, কখনো নদীবিধৌত সবুজ বাংলার গ্রামে-গঞ্জে, নগরে। কখনো সুবিশাল জাহাঙ্গীর নগর, আবার কখনো ছোট্টো শহর হরিহরা— গল্প এগিয়ে গিয়েছে সময়ের সাথে। নিজের মতো করে।
"শাহরিয়ার জাওয়াদের পৈত্রিক নিবাস ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলায়। বাবার চাকরিসূত্রে তাঁর শৈশব আর কৈশোরের সময়গুলো কেটেছে চট্টগ্রামে। বর্তমানে অধ্যয়নরত আছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে। যুক্ত আছেন বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে। নিয়মিত লেখালেখির পাশাপাশি কাজ করছেন সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য। প্রতিষ্ঠা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের সংগঠন 'বায়োলজি ফ্যাকাল্টি কো-কারিকুলার সোসাইটি'। সম্পাদনা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ফ্যাকাল্টিভিত্তিক ম্যাগাজিন 'প্রাণবার্তা'র। শাহরিয়ার জাওয়াদের লেখালেখির হাতেখড়ি ছোটোবেলায়। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, সাহিত্য সাময়িকী এবং ই-ম্যাগাজিনগুলোতে রয়েছে তাঁর সরব উপস্থিতি।"