শেখ হাফিজুর রহমানের ভারতবর্ষ এবং বাঙালির স্বশাসন গবেষণামূলক গ্রন্থ। বৃহৎ পরিসরে ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত নিয়ে একটি একক গ্রন্থ ইতোপূর্বে রচিত হয়েছে কী-না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। লেখক বহু ঐতিহাসিক পণ্ডিতের মতামতের সঙ্গে নিজের মতের তুলনামূলক ধারণা স্পষ্ট করে কখনো যুক্তি গ্রহণ, কখনো বা খণ্ডনের মধ্য দিয়ে নিজস্ব সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে মনন ও সৃষ্টিশীলতার পরিচয়ের স্বাক্ষর রেখেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন ভাষাতত্ত্ববিদের মতামত তুলে ধরে তিনি বাংলা ভাষার উৎপত্তির সময়কে বিশ্লেষণ করে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন যে, বাংলা ভাষার উৎপত্তির পূর্বে বাঙালি জাতিসত্তা, বাঙালির রাজ্য শাসন বা বাঙালির অস্তিত্ব থাকতে পারে না। তিন খণ্ডে প্রকাশিত গ্রন্থের ধারাবাহিকতায় পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবের কথা, প্রাগৈতিহাসিক কালের বৃত্তান্ত, বৈদিক যুগ, জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের সূত্রপাত গ্রন্থভেদে বেদ, গীতা, উপনিষদ সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা শেষে মুসলমান শাসনকাল, ইংরেজ শাসনকাল, পাকিস্তানের সৃষ্টি ও শাসনকালের ঊনপঞ্চাশে আওয়ামী লীগের গঠন, ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, সামরিক শাসন, পাকভারত যুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ঘোষণা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং সত্তরের নির্বাচন পর্যন্ত বর্ণনা করে ১৯৭১-এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই যে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে বাঙালির স্বশাসন প্রতিষ্ঠা ঘটে; এতোসব নিরীক্ষা কৌতূহলী ও আগ্রহী ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের গবেষক, পাঠক, শিক্ষার্থীদের সহায়ক হবে। আমাদের জাতিতত্ত্বের উৎস অনুসন্ধানে শেখ হাফিজুর রহমানের ভারতবর্ষ এবং বাঙালির স্বশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে নিঃসন্দেহে।
কবি শেখ হাফিজুর রহমানের জন্ম টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৫৪-র ৩০শে এপ্রিল। বাবা শেখ হাবিবুর রহমান, মা শেখ সৈয়দা বেগম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে তিনি স্নাতক। স্কুলজীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। আত্মজ হাবিব এই ছদ্মনামে লিখতেন। পরে যখন কবিতাগুলাে গ্রন্থভুক্ত হয় তখন কবি স্বনামে আত্মপ্রকাশ করেন। ইতােমধ্যে মােট ৬টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত। বাংলাদেশ থেকে নােঙরের তরী ২০০১, মধুমতি ২০০৩, অপরাহ্নের ম্লান আলােয় স্নান ২০১০, দ্রোহের পদাবলী ২০১০। ভারত থেকে গণ পাঁচালি ২০০৭ এবং জার্মানি থেকে জার্মান-বাংলা দ্বিভাষিক কাব্যগ্রন্থ শেখ হাফিজুর রহমানের নির্বাচিত কবিতা স্বপ্ন ২০১১। প্রথম ধারাবাহিক লেখা ইতিহাস কথা কও' শিরােনামে নিয়মিত প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক খবর পত্রিকায়। পরে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রেক্ষাপট নামে লেখাটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। তাঁর কবিতা চলচ্চিত্রেও রূপায়িত হয়েছে। “রিনি সুতাের মালা’ কবিতাটি অবলম্বনে তথ্যচিত্ররূপে ২০০৮ সালে কলকাতায়। পরিচালনা করেন আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত কলকাতার স্বনামধন্য চলচ্চিত্র পরিচালক শ্রীমতী জয়শ্রী ভট্টাচার্য। এই চলচ্চিত্রটি ২০০৯ সালে লন্ডনে রেইনবাে। ফিল্ম ফ্যাস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয় এবং দর্শকদের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে। তাঁর কবিতাগুলাে বিভিন্ন কাব্যসংকলনেই কেবলমাত্র স্থান পায়নি আবৃত্তিকারদেরও আকৃষ্ট করেছে।