প্রায় ছিচল্লিশ বছর পূর্বে, উনিশশ ছিয়াত্তরে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে পড়–য়া একজন শিক্ষার্থীর মনোজগতের টানাপড়েনের কথা বলা হয়েছে এখানে। সে হিসেবে পূর্ববর্তীকালের এক তরুণের লেখা একটি অপ্রকাশিত রচনা বলা যায় বইটিকে। প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক জীবনই মূল উপজীব্য। তবে পরোক্ষভাবে এসেছে ভারত বিভাগ এবং বাস্তচ্যুত কিছু মানুষের জীবনসংগ্রাম এবং ষাট দশকের মানুষের সামাজিক মূল্যবোধ। উনিশ-বিশ বছর বয়েসি একজন তরুণের মনোজগতের স্থিরতা, পরিপক্কতা, ভালো-মন্দ সঠিকভাবে নির্ণয় করার ক্ষমতা থাকে না। তারপরও তারুণ্যের অস্থিরতা, খামখেয়ালি, প্রতিবাদ, ইত্যাদি কখনও সরলভাবে কখনও আপাত-কাল্পনিক কিংবা পরাবাস্তবতার আলোকে তুলে ধরা হয়েছে। তরুণ মন-মানসিকতা সমসাময়িক জীবনকে যেভাবে দেখে সেভাবেই ঘটনাপ্রবাহ বিবৃত হয়েছে। কোনও নির্দিষ্ট আদর্শ, সমাজচিন্তা, উপদেশ, কিংবা পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করেনি। বইটি অনেক পরে প্রকাশের প্রধান একটি কারণ এই যে, সমকালীন বিষয়বস্তু মানুষের দৈনন্দিন জীবনে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। কোনও একটি সময় অতীত হয়ে গেলে তার প্রতি মানুষের আগ্রহ সৃষ্টি হয়। অতীতের প্রতি মানুষের আগ্রহের কারণেই বই, পত্রপত্রিকায় পুরোনো সময়ের নানা প্রতিপাদ্য ছাপা হয়। সেসব কখনও একপেশে কিংবা আদর্শ-নির্ভর। আদর্শের বাড়াবাড়ি সাধারণ মানুষের কাছে অপছন্দনীয়। এ বইতে সময়কে বিকৃত করার কোনও কৌশল কিংবা সচেতন চেষ্টা নেই। এই বইয়ের মূল প্রতিপাদ্য সময়; সঙ্গে প্রেম, ভালোবাসা, জীবনের নানা অনুষঙ্গ। সময় স¤পর্কে মানুষের ধারণা অ¯পষ্ট। কোনও একটি সকাল কারও জন্য সুন্দর, আবার তার ঠিক পাশের মানুষটির জন্য খুবই অসুন্দর মনে হতে পারে। মনোজগতে সময় একটি বহুমাত্রিক বিষয়। পাশাপাশি চলতে থাকা বেশ কিছু মানুষের চিন্তা-চেতনার ভিন্নতা এবং ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতায় চলমান সময়কে উপলব্ধি করার চেষ্টাও এই বইয়ের এক আকর্ষণ! সময়ের নির্মোহ প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টায় পরাবাস্তবতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে কখনও কখনও। আশা করা যায় যে মনোজগতের সময়-নির্ভর চিন্তা-চেতনা অনুধাবনের যে চেষ্টা লেখক করেছেন এই বইতে, তা কেউ কেউ গ্রহণ করবে।