সানজিদা হোসাইন এর ‘কিংবদন্তির রাজকাহন’ বিশ জন অসাধারণ বাঙালি ব্যক্তিত্বের জীবন কাহিনির অসামান্য এক সংকলন। এসব ব্যক্তিত্বের তালিকাভূক্ত হয়েছেন সমাজ সংস্কারক, শিক্ষাবিদ, কবি, ঔপন্যাসিক, সঙ্গীত শিল্পী ও অভিনেতা। এই তালিকার সতেরোজনই এখন আর পৃথিবীতে নেই। কিন্তু তাদের কীর্তি বেঁচে আছে। সাধারণত যা ঘটে থাকে.. কোনো মানুষ, তিনি দেশ, জাতি ও সমাজের জন্য অনন্য অবদান রেখে গেলেও দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশই বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যান। তাদের স্মরণ রাখার জন্য যা করা প্রয়োজন তা হলো তাদের জীবন ও কর্ম নিয়ে জানা ও আলোচনা করা। ‘কিংবদন্তির রাজকাহন’ প্রচলিত অর্থে কোনো জীবন কাহিনি নির্ভর বই নয়। আলোচিত ব্যক্তিদের জীবনের উল্লেখযোগ্য কিছু দিককে অত্যন্ত সহজে, কিন্তু পরিপূর্ণ আবেগে ছন্দবদ্ধ ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে। প্রত্যেকের জীবনের এমন কিছু দিক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যার ফলে কোনো কোনো ব্যক্তিত্ব তাদের জীবনের চেয়েও বিশাল রূপে ধরা পড়েছে এবং এজন্য পুরো কৃতিত্ব সানজিদা হোসাইনের। তাঁর লেখার মধ্যে এমন একটি গতি আছে যা পাঠককে বাধ্য করবে তাঁর প্রিয় ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে একাত্ম হতে। চলে যাওয়া খ্যাতিমান মানুষগুলো পাঠকের কাছে জীবিত হয়ে ওঠবেন, মনে হবে তারা আমাদের মাঝেই আছেন, আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন। লেখকের কৃতিত্ব এখানেই। গ্রন্থে আলোচিত ব্যক্তিত্বদের জীবনের বেশকিছু দিক, যা আমার নিজেরই অজানা ছিল, সানজিদা হোসাইনের লেখা থেকে তা জেনে সমৃদ্ধ হয়েছি। আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু
সানজিদা হােসাইনের জন্ম ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায়। বাবা বীর মুক্তিযােদ্ধা মরহুম সােহরাব হােসেন এবং মা মিসেস সাহেরা হােসেনের চার সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। খুব অল্প বয়সে বাবা হারানােয় বড় বােন ও ছােট দুই ভাই নিয়ে জীবনের কঠিন বাস্তবতাগুলাের মুখােমুখি হতে হয় নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই। লেখাপড়া, বেড়ে ওঠা সবকিছুই ঢাকায়। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে বাবা মায়ের শখেই বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে ভর্তি হওয়া। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞান না... তার চোখে ছিল অন্য স্বপ্ন। বৈবাহিক সূত্রে স্থায়ী হন ঢাকার কমলাপুর জসীমউদ্দিন রােডের ঐতিহ্যবাহী মাতবর বাড়ির যৌথ পরিবারে। মােহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন মাতবর ও বেগম সফিউনেসার সর্বকনিষ্ঠ ছেলে আকরাম হােসেনের সাথে পারিবারিক ভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামী পেশায় একজন ব্যবসায়ী হলেও সৃজনশীলতা ও মননশীলতার মূল পাঠ তার হাত ধরেই শেখা। জীবনের নিগূঢ় ও গভীরতম আদর্শ ও মূল্যবােধের অন্যতম পথপ্রদর্শক হিসেবে তিনি লেখকের পাশে থেকে তাকে সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন নিরলসভাবে। দুই সন্তান ইবনাত তারাম প্রিয়ঙ্গী ও আরিক আকরাম প্রিয়মকে নিয়ে ছােট্ট সুখের সংসারে অবসর সময়ের অনেকটাই কাটান লেখালেখি করে। গল্প না কল্পনা” লেখকের প্রথম একক উপন্যাস। এর আগে বিভিন্ন সংকলন ও পত্র-পত্রিকার সাহিত্য পাতায় লেখা প্রকাশিত হলেও মূল ধারায় সাহিত্যে পথ চলার শুরু চলন্তিকার হাত ধরে। বর্তমানে চলন্তিকা মিডিয়ার সাব-এডিটর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। লেখালেখির মূল অনুপ্রেরণা মায়ের কাছ থেকে পেলেও ছেলেমেয়ের উৎসাহ এবং লেখক হিসেবে মায়ের পরিচয় নিয়ে তাদের উচ্ছ্বাস সাহিত্যচর্চায় উজ্জীবিত করে সানজিদা হােসাইনকে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিপাদ্য করে তিনি প্রমাণ করতে চান একটা সুস্থ, সুন্দর, স্বাভাবিক সাংসারিক জীবনযাপন করেও সাহিত্যাঙ্গণে বিচরণ করা সম্ভব।