বঙ্গবন্ধুর ভাষণে ইসলামী ভাবধারা বইটি ইসলামের প্রতি বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাস ও প্রতিশ্রুতির প্রতিফলণ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসনামলে ১৯২০ সালে জন্মগ্রহণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। শৈশব পেরিয়ে কৈশোরকাল থেকেই তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার মাধ্যমেই বড় হয়ে ওঠেন। এ সময় থেকে তিনি অসহায়, অভাবী ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসেন। এ সময়েই তার চরিত্রের মধ্যে জ্ঞান, মেধা, সততা, সত্যবাদিতা, সচেতনতা, সাহস, মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা, দেশের প্রতি ভালোবাসা, দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ, আত্মমর্যাদা এবং আপোষহীন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে পুরো বাঙালি জাতিকে মুক্তির জন্য লড়াই শুরু করেন। এ লড়াইয়ে তিনি ১৩ বছর ৯ মাস কারাভোগ করেন। এরপরও তিনি বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্য থেকে ফিরে আসেননি। বহু লোভ ও নির্যাতনের পরও তাকে কেউ দমাতে পারেনি। দিনে দিনে তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালির হৃদয়ের মানুষ ও অবিসংবাদিত নেতা। এ সময়ে তিনি মাঠে ময়দানে জনগণকে নিয়ে বিভিন্ন আন্দোলনে নিয়োজিত হন। তখনই তিনি শেখ মুজিব থেকে হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর স্বাধীনতা পর্যন্ত তিনি বহুসংখ্যক বক্তৃতা ও ভাষণ দান করেন। এসব বক্তৃতা ও ভাষণ বাঙালি জাতিকে দেশ স্বাধীন করার পেছনে অলৌকিক ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে ৭ই মার্চ ১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত ভাষণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মাইলফলক হয়ে রয়েছে। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে প্রত্যাবর্তন করে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে যে ভাষণ দান করেন তাও ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ স্বাধীন করেই তাঁর আন্দোলন, বক্তৃতা ও ভাষণদান থেকে বিরত হয়ে যাননি। বরং তিনি হয়ে ওঠেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একজন সুবক্তা ও বাগ্মি। ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আলজিরিয়ার্স জোটনিরেপক্ষ শীর্ষ বৈঠক উপলক্ষ্যে সমবেত ইসলামী নেতৃবৃন্দের ওপর প্রভাব বিস্তারের জন্যে বঙ্গবন্ধুর আকর্ষণীয় বাগ্মিতা এ প্রসঙ্গে স্মর্তব্য। আর এ থেকেই দেখা যায় যে, বাংলাদেশের জন্য ইসলামী বিশে^র স্বীকৃতি আদায় করিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে তিনি মিশর, আলজেরিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের সাথে কুটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেন। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ২৯ তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদান করে বাংলায় ভাষণ দিয়ে বিশ^ দরবারে বাংলা ভাষাকে সুউচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন। বঙ্গবন্ধুর অধিকাংশ ভাষণ আল্লাহ্ ওপর ভরসা ও তাঁর ওপর নির্ভর করে শুরু করেছেন। বহুসংখ্যক ভাষণের প্রথমে, মাঝে ও শেষে একাধিকবার ‘ইনশাআল্লাহ্’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। তাঁর ভাষণে স্বাধীনতা, মানব প্রেম, দেশ প্রেম, মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা, আত্মসমালোচনা, আত্মসংযম, আত্মশুদ্ধি সম্পর্কে বহুবার উল্লিখিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে শুধু ইসলামের বিভিন্ন বিষয় উল্লিখিত হয়েছে এমনটি নয়; বরং তাঁর ভাষণে ইসলামে নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ যেমন- দুর্নীতি, দুর্নীতিবাজ, ঘুষ, ঘুষখোর, মুনাফেকী, মুনাফাখোরী, চুরি, ডাকাতি, জুয়া, মদ, অত্যাচার, নির্যাতন, শোষণ, ব্যভিচার, হত্যা ইত্যাদি বারবার উল্লিখিত হয়েছে। এ গ্রন্থটিতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে ইসলামী ভাবধারার বিশ্লেষণে কুরআন, হাদীসসহ বিভিন্ন ইসলামী গ্রন্থের সহায়তা গ্রহণ করা হয়েছে- যা পাঠক বৃন্দকে বঙ্গবন্ধুর ইসলামপ্রিয়তা সম্পর্কে সঠিক ধারণা প্রদান করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। জন্ম ১৯৭৩ সালের ১ মার্চ, রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত ‘চতরা’ গ্রামে। তার পিতা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ শফিকুল্লাহ্ এবং মাতা হাজিয়াহ্ সকিনা বেগম। তিনি চট্টগ্রাম আলমশাহ্ পাড়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ১৯৮৮ সালে দাখিল এবং ১৯৯০ সালে আলিম পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে বি.এ.অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং ১৯৯৪ সালে এম.এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ২০০১ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৯৭ সালে চট্টগ্রাম আলমশাহ্ পাড়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল ফিকহে ৪র্থ স্থান এবং ১৯৯৮ সালে সিরাজগঞ্জ হাজী আহমদ আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল হাদীসে চতুর্দশ স্থান অধিকার করেন। শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর ১৯৯৮ সালের ২৫ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন এবং ২০১১ সালের জানুয়ারিতে প্রফেসর পদে পদোন্নতি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি উক্ত বিভাগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ: ‘আস্-সিহাহ আস্-সিত্তাহ: পরিচিতি ও পর্যালোচনা’ (২০০২) আল-মাকতাবাতুশ্ শাফিয়া, রাজশাহী। ইসলামী গবেষণা পদ্ধতি (২০১২); ‘আখলাক ও নৈতিকতা: ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি’ (২০১৮) ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা। ‘বঙ্গবন্ধুর ভাষণে ইসলামী ভাবধারা’ (২০২১) বিআইআইটি পাবলিকেশন্স, ঢাকা। ‘পারস্পরিক অধিকার: ইসলামী নির্দেশনা’ (২০২২) এপিএল, ঢাকা। ‘বঙ্গবন্ধুর রচনাবলিতে ধর্মীয় চিন্তাধারা’ (২০২১), সিসটেক পাবলিকেশন্স, ঢাকা। এছাড়াও আরবি ভাষায় তার ৩টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয় (২০০২)। প্রবন্ধ লিখনে ড. মাহবুব অত্যন্ত পারদর্শী। ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রেফার্ড জার্নালে তার লিখিত ৮০টির ঊর্ধ্বে প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। মাসিক, স্মরণিকা, স্মারক ও দৈনিক পত্রিকায় প্রায় শতাধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। আল-কুরআনুল কারীম সংক্ষিপ্ত বিশ^কোষে (১ম-৬ষ্ঠ খণ্ড) তার প্রায় দুই শতাধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।