পৃথিবীর প্রথম মানব ক্লোনের নাম নিলিন। তৈরি করেছেন প্রফেসর রহমান, বাংলাদেশেই। সম্পূর্ণ প্রজেক্টটি ছিল অতি গোপনীয়। প্রজেক্টটিতে অর্থায়ন করেছে ডিডিলিন নামক এক বিদেশি ওষুধ গবেষণা প্রতিষ্ঠান। উনিশ বছর বয়সি সোনালি সবুজ চুলের অপূর্ব সুন্দর নিলিনকে সবার সম্মুখে উন্মোচন করার আগেই ডিডিলিন কোম্পানি দাবি করে বসে নিলিনকে তাদের নিকট হস্তান্তর করতে হবে এবং আরো জানায় নিলিনের উপর তারা গবেষণা করবে। রাজি হন না প্রফেসর রহমান, ডিডিলিনকে বুঝাতে চেষ্টা করেন যে নিলিন ‘মানুষ’। কিন্তু ডিডিলিন কর্তৃপক্ষ রাজি নয়, নিলিনকে তাদের চাই-ই-চাই। নিলিনের উপর গবেষণা করে এক নিলিন থেকে হাজার হাজার নিলিন তৈরি করবে তারা। তারপর তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করবে পৃথিবীর মানুষের কাছে। পুরো বিষয়টা ব্যবসায়িক। প্রফেসর রহমান রাজি না হওয়ায় ডিডিলিন দুজন সিক্রেট এজেন্টকে দায়িত্ব দেয় নিলিনকে পাচার করে বাংলাদেশের বাইরে এনে ডিডিলিনের গবেষণাগারে পৌঁছে দেয়ার জন্য। মিশনের প্রথম পর্বে তারা অপহরণ করে প্রফেসর রহমানকে। কিন্তু হাতছাড়া হয়ে যায় নিলিন। ইনকিউবেটর থেকে বের হয়ে নিলিন এখন ঢাকার রাস্তায়, অলি-গলিতে। সবকিছুই অপরিচিত তার। ঘটনাক্রমে তার সাথে পরিচয় হয় নিরবের। নিরব বুঝতে পারে নিলিন সাধারণ কোনো মানুষ নয়। নিলিনের অবিশ^াস্য সব ক্ষমতা রয়েছে। একটি ক্ষমতা হলো সে ভবিষ্যৎ দেখতে পারে। আর তাছাড়া রয়েছে তার সুন্দর, কোমল আর নিষ্পাপ ভালোবাসায় ভরা একটা মন। সেই ভালোবাসার মনে নিরব যখন হারিয়ে যাচ্ছে তখনই নিয়োগপ্রাপ্ত এজেন্টরা অপহরণ করতে সমর্থ হয় নিলিনকে। নিলিন এখন গোপন গবেষণাগারে, শুরু হতে যাচ্ছে তার উপর গা শিউরে ওঠা ভয়ংকর সব গবেষণা। শেষ পর্যন্ত কী নিলিনকে বাঁচাতে পেরেছিল নিরব!
লেখক মোশতাক আহমেদ এর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ফরিদপুর জেলায়। পেশায় একজন চাকুরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও লেখালেখির প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রচুর। এ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন নিয়েই সবচেয়ে বেশি লিখেছেন। বাংলা সায়েন্স ফিকশন জগতে তার পোক্ত একটি অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মোশতাক আহমেদ এর বই সমূহ ভৌতিক, প্যারাসাইকোলজি, মুক্তিযুদ্ধ, কিশোর ক্ল্যাসিক, ভ্রমণ ইত্যাদি জঁনরাতে বিভক্ত। যেকোনো একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতেই পছন্দ করেন। মোশতাক আহমেদ এর বই সমগ্র সংখ্যায় পঞ্চাশ পেরিয়েছে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ছিল ‘জকি’। এটি একটি জীবনধর্মী উপন্যাস। ২০০৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। মোশতাক আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে ফার্মেসি বিভাগে, পরে আইবিএতে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনার খাতিরেই হোক বা কর্মজীবনের তাগিদেই হোক, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেক ভ্রমণ করেছেন। সেসব ভ্রমণকাহিনীর আশ্রয়ে তাই ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনীগুলোও। তাঁর সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শুধু লেখালেখিতেই গণ্ডিবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাজারবাগের পুলিশ ও পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মোশতাক আহমেদ ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পায়। তাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে এ পর্যন্ত রয়েছে ২০১৩ সালের কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৫ সালের সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার এবং সর্বশেষ সংযুক্তি হিসেবে সায়েন্স ফিকশন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭।