‘অনুভবের শব্দমালা’ কবি কাজী সেলিনার মনের জানালা। কবিতা ও রঙছবি খেলা দেখতে দেখতে বড়ো হয়ে যার হাত প্রসারিত হয় মানবিক চেতনায়, লিখে প্রকাশ করে সেই প্রেম সেই বিপরীত স্রোতের দাহ। কাজী সেলিনার প্রথম কবিতার বই, বলা যায় অন্তরের আশ্রয়, অনেক অভিজ্ঞতার ফসল, অনেক দেখা ও না দেখার কষ্ট সুখের বৃত্ত এই ‘অনুভবের শব্দমালা’ কাব্যগ্রন্থ। একজন দক্ষ আবৃত্তিকারের দীর্ঘদিনের অভ্যাসের আঁচল স্নিগ্ধ করে শব্দে, বাক্যে, প্রশ্নে। কখনো ‘ছদ্মবেশী স্নায়ুর যন্ত্রণায়’ অভিশাপ দেয় আবার শৈশবের বন্ধু বাউল বাতাস দিয়ে যায়। ‘জেগে থাকে জন্মের ঋণে’ রক্তঝরা ইতিহাস। ‘দ্যাখা হবে রণাঙ্গনে’ কবিতায় আমরা কাজী সেলিনাকে দেখি প্রতিবাদে সোচ্চার ‘কন্যাশিশুকে অবজ্ঞার দায়ে অগ্নিগিরির উদ্ধত লাভার মতো জ্বলবে তোমার ক্ষয়িষ্ণু যৌবনের দম্ভ প্রস্তুত থেকো, একদিন দ্যাখা হবে রণাঙ্গনে বীরাঙ্গনা বেশে।’ কাজী সেলিনার গুছিয়ে শব্দ তৈরির দক্ষতা অনবদ্য। যেমন, ‘কষ্টের চিতায় পোড়ে দগ্ধ শরীর’ কবিতায় যখন বাক্য হয়ে আসে, ‘অনিদ্রার পোড়া চোখে /জমা হয় জলের আবাদ’ তখন আমরা মুগ্ধ হই অনেক বাস্তবতায়। সেলিনার বেশিরভাগ কবিতা কোনো না কোনো অসঙ্গতিকে তুলে এনে দেখিয়েছে আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ সমাজের ছবি। সেই সাথে ব্যক্তিগত সহজ দর্শনে পাওয়া না পাওয়ার কষ্ট। সেলিনা এখানে আন্তরিক। মিঠে, কড়ায় দেখিয়েছেন অনেকের অনেক না বলা শ্লোক। আবৃত্তিকার বলেই চিনতে পারেন শব্দ খেলার সব ওঠা-নামা। একদিন সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে এই বইটি চাবি খোলার কাজ করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।