মানুষ জন্মগতভাবেই জ্ঞানের অধিকারী, কারণ মানুষ সৃষ্টিকর্তার সেরা সৃষ্টি। মানব সৃষ্টির পর থেকেই মানুষের জ্ঞান ভাণ্ডার ক্রমে ক্রমে হাজারো তথ্য-উপাত্তে ভরে ওঠে। একটি শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে বহুমুখী উপাত্ত বা তথ্যের মুখোমুখি হতে হতে পর্যায়ক্রমে সে বহুমুখী জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, জ্ঞানের চারটি স্টেজ বা ধাপ রয়েছে। প্রথমটি হলো ডেট বা উপাত্ত, দ্বিতীয়টি হচ্ছে তথ্য বা ইনফরমেশন, তৃতীয়টি হচ্ছে জ্ঞান এবং সর্বশেষ বা চতুর্থ বাপ হচ্ছে প্রজ্ঞা। সহজভাবে বললে মানুষ প্রথমে ছোট ছোট যেসব বার্তা সংগ্রহ করে সেগুলো হচ্ছে উপাত্ত বা ডেটা। এসব উপাত্ত বা ডেটা অরগানাইজড বা সুসংগঠিত হয়ে একটি পরিপূর্ণ তথ্যের জন্ম দেয়। তথ্য জ্ঞানের কাছাকাছি রূপ অথবা সুসংগঠিত তথ্যকে বলা হয় জ্ঞান। অর্থাৎ, পর্যায়ক্রমে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের অনেক তথ্য বা ইনফরমেশন অরগাইজড বা সুসংগঠিত হয়ে একটি পরিপূর্ণ জ্ঞানের জন্ম দেয়। এভাবে বহুমুখী জ্ঞানের পরিপূর্ণ বা সম্মিলিত রূপ হচ্ছে প্রজ্ঞা। এই প্রজ্ঞা হচ্ছে জ্ঞানের সর্বোচ্চ ধাপ অধিক জ্ঞান চর্চা করে যাঁরা এই মহামূল্যবান প্রজ্ঞার অধিকারী হোন তাঁরাই হচ্ছেন প্রজ্ঞাশীল বা প্রজ্ঞাবান মানুষ। আর এসব প্রজ্ঞাবান মানুষরাই হচ্ছেন এ আধুনিক সভ্যতার ধারক, বাহক বা রূপকার। সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকে এ ধরনের চিন্তাশীল ব্যক্তিদের প্রজ্ঞা বা মোধা নিঃসৃত কথা, উক্তি, বাণী এবং ভাষণের একটি সামষ্টিক রূপ যখন কাগজে মুদ্রিত হয় তখন তাকে বলা হয় পুস্তক বা বই। বহু পণ্ডিত, গবেষক, গবেসণা সংস্থা এবং বিজ্ঞানীরা পুস্তক বা বইয়ের বহুবিধ সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। এগুলোর মধ্যে UNESCO-এর প্রদানকৃত বইয়ের সংজ্ঞা সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য বলে সকলে একমত পোষণ করেন। সে মতে, কোনো প্রজ্ঞাবান বা চিন্তাশীল মানুষের মেধা নিঃসৃত কথা, উক্তি, বাণী এবং ভাষণের একটি সামষ্টিক রূপ যা কাগজে মুদ্রিত হতে হবে কমপক্ষে ঊনপঞ্চাশ পৃষ্ঠা সম্বলিত এবং কোনো কভার পৃষ্ঠা বা মলাট দ্বারা আবদ্ধ বা বাঁধাইকৃত রূপ হতে হবে; আর এ ধরনের যাবতীয় প্রকাশনাই হচ্ছে পুস্তক বা বই। উনপঞ্চাশ পৃষ্ঠার কম হলে সেগুলে হবে Pamphlet বা Booklet অথবা বাংলায় বলা হয় পুস্তিকা। অনেক পণ্ডিত ধারণা করেন যে, 'বই' শব্দটি আরবি শব্দ ওহি থেকে এসেছে যার অর্থ দিব্যবাণী। ইংরেজি ‘Boc' থেকে ইংরেজি Book শব্দটি এসেছে। 'Boc' অর্থ বীচ পাতা। বাংলায় 'বই' শব্দের কয়েকটি প্রচলিত প্রতিশব্দ হচ্ছে-কেতাব, গ্রন্থ, পুঁথি এবং পুস্তক। ইত্যাদি। গ্রিক শব্দ 'Biblion' থেকে ইংরেজি 'Biblio' শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। এই 'Biblio' শব্দের অর্থও হচ্ছে ইংরেজিতে Book বা বাংলায় বই। এই 'Biblio' শব্দ দ্বারা বই সম্পর্কিত ইংরেজিতে কয়েকটি বিখ্যাত শব্দ রয়েছে, এগুলো হলো-Bibliobibale ? বাংলায় অর্থ ‘যে অতি বেশি বই পড়ে', Biblioclast যার বাংলায় অর্থ ‘যে বইয়ের পাতা নষ্ট করে বা ছিড়ে’, Bibliognoste যার বাংলায় অর্থ ‘যে বইয়ের নানা সংস্করণ এবং বইয়ের নানা খুঁটি-নাটি বিষয় সম্পর্কে অভিজ্ঞ', Bibliography যার বাংলায় অর্থ গ্রন্থপঞ্জি বা পুস্তকের বিবরণ, Bibliographist যার বাংলায় অর্থ ‘যে পুস্তকের বিবরণ দেয়', Biblioklept যার বাংলায় অর্থ ‘যে বই চুরি করে', Bibliolater যার বাংলায় অর্থ ‘বই উপাসক বা বই পূজারি', Bibliomane যার বাংলায় অর্থ ‘যে এলোমেলোভাবে বই সংগ্রহ করে', Bibliomaniae যার বাংলায় অর্থ ‘বই বাতিক', Bibliophile যার বাংলায় অর্থ 'বই প্রেমিক', Bibliophage যার বাংলায় অর্থ 'যে বই খায়', Bibliopobe যার বাংলায় অর্থ 'বই ভীতু', Bibliopole যার বাংলায় অর্থ ‘বই বিক্রেতা', Biblioriptos যার বাংলায় অর্থ 'যে চারদিকে বই ছুড়ে’, Bibliosopher যার বাংলায় অর্থ ‘যে বই থেকে জ্ঞান আহরণ করে’, Bibliotaphe যার বাংলায় অর্থ 'যে বইকে কবর দেয় বা লুকিয়ে রাখে’, এবং Bibliotherapy যার বাংলায় অর্থ ‘বই দ্বারা চিকিৎসা অথবা বইয়ের Medicinal Value বা Power দ্বারা একটি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। এই Bibliotherapy-ই হচ্ছে মুখ্য আলোচনার বিষয়। কিছু মহামূল্যবান বইয়ের রয়েছে এই Medicinal Power বা ঔষধি গুণ। বইয়ের এই Medicinal Power বা ঔষধি গুণ কীভাবে মানব জীবনের উন্নতি ও উৎকর্ষ সাধন করে সে সব বিষয়ে এখানে আলোকপাত করা হয়েছে। বই পড়ে জীবনে কীভাবে অনাবিল প্রশান্তি লাভ করা যায়, জীবনে কীভাবে সফলতা ও সুনামের সাথে প্রতিষ্ঠা লাভ করা যায়, জীবনে নানা বাঁকের হতাশা, দুরাশ্য, জরা-ব্যাধি-ক্লান্তি, মহামারি, দুর্ভোগ, দুর্যোগ থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায়, কীভাবে একজন কোমলমতি শিশুর মানবিক বোধ, একনিষ্ঠতা, ন্যায়পরায়ণতা, একাগ্রচিত্ততা, লেখা-পড়া ও কাজের প্রতি মনোযোগিতা বেশি বেশি জাগ্রত হয়, জীবনে কীভাবে কঠোর পরিশ্রমী ও অধ্যবসায়ী হয়ে সফলতার চরম শীর্ষে উত্তীর্ণ হওয়া যায় এবং সর্বোপরি জীবনে কীভাবে মনুষ্যত্ববোধ পরিপূর্ণরূপে বিকশিত ও প্রস্ফুটিত হয়-সে সকল বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বহুবিধ উদাহরণ, উপমা ও গল্পের সন্নিবেশ ঘটিয়ে সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় গভীরভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।
Title
বই পড়া প্রশান্তি ও প্রতিষ্ঠা লাভ - লাইব্রেরি সাইন্স