বইটা কেন লিখছি জানি না, কেন আপনি পড়বেন তাও বলা মুশকিল। সাক্ষাৎকার ধারণার মধ্যেই পলিটিক্যাল এসেন্স রয়েছে একটা। ঘনিষ্ঠ-অঘনিষ্ঠ যে কোনো ব্যক্তিকে বলে দেখুন আপনার সাক্ষাৎকার নিতে চাই, দুটো প্রতিক্রিয়া আসা অবধারিত: আমি তো বিখ্যাত কেউ নই, আমার আবার কিসের সাক্ষাৎকার! দ্বিতীয়ত, এটা কোথায় ছাপা হবে। অর্থাৎ জাতীয় অথবা আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক পরিচিত না হলে তার সাক্ষাৎকার প্রদানের অধিকার নেই, এবং সাক্ষাৎকার নেয়া মানে সেটা প্রকাশিত হবার বাধকতা থাকতে হবে। অবশ্য একাডেমিক গবেষণার উদ্দেশ্যেও ফরম্যাটবদ্ধ সাক্ষাৎকার নেয়া হয় অনেক সময়। অথচ এইসব সাক্ষাৎকার যার পড়ে তারা আমাদেরই মতো প্রাদপ্রদীপের বাইরে থাকা আটপৌরে মানুষ; প্রতিনিয়ত আমরা আঁকি আরেকটু জীবনের নকশা, মনে জাগে দার্শনিকতা-বৈপ্লবিকতা-অহম-আত্মঅন্বেষণসহ আরো কত চেতনা। সেসবের ভাষা তাদেরই বোধগম্য যাদের জীবনযাপনও আমাদেরই ধাঁচের। বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ-রাজনীতিবিদ-ব্যবসায়ী-গায়ক-লেখকেরা প্রাদপ্রদীপের সামনে অভ্যস্ততার পৌনঃপুনিকতায় হয়ে পড়েন ক্লান্তিকর, প্রেডিক্টেবল, পুনরাবৃত্তিপ্রবণ এবং আরোপিত। তাদের ভাবনা জেনে আদৌ কি আপনার জীবনভাবনায় সত্যিকারের পরিবর্তন আসে, নাকি সাময়িক স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয় ‘একদিন আমিও..’ যাহোক, কী করবেন আপনার অভিরুচি, তবে আমি ১৫ জন ব্যক্তির সাথেকার আলাপনকে উপজীব্য ধরে ব্যক্তির সাথে প্রতিষ্ঠান-পেশা-রাষ্ট্র-সামাজিকতা-অনুশাসন-মূল্যবোধ-কালচারসহ বিভিন্ন অনুঘটকের গ্যাপ অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হয়েছিলাম। মন চাইলে ২-৫ পৃষ্ঠা নেড়েচেড়ে দেখতে পারেন।
প্রথমত আমি একজন মানুষ। তাই সবার মত আমারও একটি জন্মস্থান-জন্মকাল ছিল। তবে তা প্ৰকাশ-অপ্ৰকাশে গল্পের প্রাসঙ্গিকতায় কোনই গুরুত্ব তৈরি হয় না। ঠিক যেমনটা হবে না। আমার শিক্ষাগত কিংবা পেশাগত পরিচয়ে। অক্ষরজ্ঞান নেয়া ও কিছু কাগুজে সনদ সংগ্রহের প্রয়োজনে যেমন কোন প্রতিষ্ঠানে আমাকে পড়াশোনা তাগিদেও কোথাও নিযুক্ত আছি, এটাই মৌলিক সত্য। মানুষের পেশাগত কিংবা সামাজিক আইডেন্টিটি তত্ত্বে কখনোই আস্থা পাইনা। নিজেকে তাই "ফ্রি সোল’ বা ‘মুক্ত আত্মা’ পরিচয় দিতেই পরম স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য আমার। তবে গল্প নিয়ে যে কোন কট্টর সমালোচনাকে ক্লেদাক্ত প্ৰশংসার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যায়ন করি। সুতরাং সমালোচনার উদ্দেশ্যে চেনা-অচেনা যে কারো সঙ্গে আন্তর্জালিক যোগাযোগ হতে পারে। সার্বক্ষণিক শর্তেই।