মহাবিশ্বের সকল নক্ষত্র তথা গ্যালাক্সি কী অতি দূর ভবিষ্যতে প্রবল টানে পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে যাবে? অতি ছোট্ট আয়তনে ঘনীভূত হয়ে দুমচে মুচড়ে কী বিনষ্ট হয়ে যাবে সৃষ্টির সবকিছুই? প্রাণের অস্তিত্ব কী বিলীন হয়ে যাবে? এক শর্তে এমনটি হওয়ার কথা। কিন্তু কেন হবে? কীভাবে হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে এই বইটিতে। অন্যদিকে আমাদের মহাবিশ্ব চিরপ্রসারণশীলতার বৈশিষ্ট্য নিয়ে সৃষ্টি হয়ে থাকলে তার পরিণতি অন্যরূপে। এক্ষেত্রে মহাকাশে নিয়ত সকল নক্ষত্র পরস্পর থেকে দূরে সরে যেতে থাকবে। দূরে সরে যেতে যেতে কী এরা পরস্পর থেকে মহাকর্ষীয় বন্ধন ছিন্ন করে ফেলবে? অতি দূর ভবিষ্যতে কার্যকরীভাবে বিনষ্ট হয়ে যাবে কী মহাকাশীয় সমস্ত প্রক্রিয়া? নক্ষত্ররা তখন পুরোপুরিভাবে শক্তি হারিয়ে নিথর হয়ে যাবে? এরা কী একা একা বিচরণ করতে থাকবে অন্ধকারময় অসীম শূন্যতায়? অবশেষে আমাদের সমগ্র মহাবিশ্ব অতি দূর ভবিষ্যতে চ‚ড়ান্তভাবে কোন দশায় পর্যবসিত হবে? পদার্থ বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও বিশ্বতত্ত্ববিদ ড. জামাল নজরুল ইসলাম দীর্ঘ গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে এঁকেছিলেন এই মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতির দৃশ্যপট। ফলস্বরূপ ১৯৮৩ সালে বিশ্ব পেয়েছিল তাঁর অনুপম সৃষ্টি ‘দি আলটিমেইট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স’ বইটি। বইটিতে দেখা যায় আমাদের এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর থেকে অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে তার যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। সময়ে সময়ে এটি আরও বহুবিধ পরিবর্তনের ছড়িয়ে থাকা গ্যালাক্সিগুলো পরিবর্তনের অনুবর্তী। পর্যবেক্ষণযোগ্য এই মহাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রায় শত বিলিয়নেরও বেশি গ্যালাক্সি। প্রতিটি সাধারণ গ্যালাক্সিতে ছড়িয়ে রয়েছে প্রায় দশ হাজার কোটি নক্ষত্র। এসব নক্ষত্রের মৃত্যু হয়। কিন্তু এদের মৃত্যুর ধরণ হয় ভিন্ন ভিন্ন। এবার প্রশ্ন হচ্ছে মহাবিশ্ব তার চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যেতে যেতে আমাদের গ্যালাক্সি, সৌরজগতে এবং আমাদের এই আদর্শ পৃথিবীকে কোন দশায় ফেলবে? দূর ভবিষ্যতে পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় আমাদের পৃথিবীর শক্তির উৎস সূর্য এক সময় লাল দানবে পরিণত হবে। অগ্নিবৎ উত্তাপে ছেয়ে যাবে সমগ্র পৃথিবী। শেষ পর্যন্ত সূর্য তার শক্তি হারিয়ে সে-ও শীতল হয়ে যাবে। নিকষ অন্ধকার পৃথিবীতে তখন বিরাজ করবে শীতলতা আর শীতলতা। এই দুই অবস্থাতেই কী পৃথিবীতে মানব সভ্যতা টিকে থাকতে পারবে? না কী মানব সভ্যতা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাড়ি জমাবে মহাশূন্যে, খোঁজে নেবে শক্তির নতুন উৎস? পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব কী তখন বিলীন হয়ে যাবে? মহাবিশ্বের প্রতিটি গ্যালাক্সিই পরিবর্তনের অনুগামী। অতঃপর এই সমগ্র মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি কী? এই বইটিতে এসব প্রশ্নের অধিক সন্তুষ্টিজনক ও যুক্তিসঙ্গত উত্তর পাওয়া যায়।
জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৩৯ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, বিশ্বতত্ত্ববিদ ও অর্থনীতিবিদ। মহাবিশ্বের উদ্ভব ও পরিণতি বিষয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। ড. জামাল মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেন্টার ফর ম্যাথমেটিকাল এন্ড ফিজিকাল সায়েন্সের গবেষক এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য বই- দি আল্টিমেট ফেইট অব দি ইউনিভার্স, ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি, রোটেটিং ফিল্ডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি, অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথমেটিক্যাল কসমোলজি, মাতৃভাষা ও বিজ্ঞান চর্চা এবং অন্যান্য প্রবন্ধ, শিল্প সাহিত্য ও সমাজ, স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ এবং দি ফার ফিউচার অব দি ইউনিভার্স। ২০০১ সালে একুশে পদকপ্রাপ্ত এই লেখক ২০১৩ সালের ১৬ই মার্চ ৭৪ বছর বয়সে চট্টগ্রামে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।