গরম ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত পেস্নটে তুললেই আমি আমার আম্মার গন্ধ পাই। মনেহয় আম্মাকে ডেকে বলি, আম্মা ভাত খেতে আসো, ভাত ঠা-া হয়ে যাচ্ছে। কখনো গরম চা’য়ে ঠোঁট পুড়লেই আমার আম্মার মুখটা ভেসে ওঠে। আমার জন্মের কিছুদিন পরেই আম্মা বিএড করতে রাজশাহী ইউনিভার্সির্টিতে চলে যান। আমরা তখন নানাবাড়িতেই থাকতাম। আমার তেমন কোনো কষ্ট হয়েছিলো কি না মনে নেই... তবে আম্মার কষ্ট হতো প্রচুর আমার জন্য। সরকারী চাকরী সূত্রে আব্বা বিভিন্ন পোস্টিং এর জায়গায় যেতেন, আর আম্মা স্কুলের শিড়্গক হয়ে আমাদের নিয়ে পড়ে রইলেন বরিশালে। নিজ হাতে সংসারের সব কাজ সেরে আমাদেরকে স্কুলে পাঠিয়ে তিনিও ছুটতেন স্কুলে। ঘরের চাবি নিয়ে আমরাও স্কুলে চলে যেতাম। আমরা সেই চাবি হারিয়ে কতবার যে ঘরের সামনের সিঁড়িতে বসে থেকেছি! আর 'আলস্নাহ আলস্নাহ' করতাম যেন আম্মা এসে ভাইয়াকে বকা না দেন। আম্মা এসে আমাদেরকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে নিজেই বকবক করতে করতে দরজা খুলতেন আর আমরা মুরগির বাচ্চার মতো তার পিছু পিছু চুপচাপ ঢুকে আম্মার সেবায় লেগে পরতাম। যাক! এ যাত্রায় তো সবাই রড়্গা পেলাম। রড়্গা আর পেতাম কই? সন্ধ্যায় যখন পড়া ধরতে বসতেন, সেদিন যেন আম্মা একটু বেশিই ‘কড়া মেজাজী মহিলা’ হয়ে উঠতেন। তখন আমরা সবাই সবার পিঠ বাঁচানোর জন্য তুখোড় পড়–য়া হয়ে উঠতাম। আজ আম্মার মধ্যে সেই বাইরে যাবার তাড়াহুড়া পাই না, আমাদেরকে নিজ হাতে ড্রেস বানিয়ে দেবার উৎসাহ দেখি না। আমার বাচ্চারা পড়তে না বসলে যখন আমি নিজেই ‘কড়া মেজাজী মহিলা’ হতে চাই তখন তিনিই বাঁধা দেন সবার আগে। আম্মারা দিনে দিনে ছোট হয়ে যান... আর আমরা বড় হয়ে উঠি। একদিন আমরাও ছোট হয়ে যাবো... আর আমার সন্তানেরা বড় হয়ে উঠবে। আমার মা’সহ সকল মাকে আমার মাথা নত করা কুর্নিশ রইলো।
শাইনি শিফা ফরিদপুর জেলায় জন্ম হলেও বাবার সরকারি চাকরির কারণে বিভিন্ন জেলায় ভিন্ন ভিন্ন। পরিবেশে বেড়ে ওঠা। ছােটবেলা থেকেই লেখালেখি ও গানের প্রতি ঝোঁক ছিল। স্কুল ও কলেজ ম্যাগাজিনে কবিতা ও গল্প লিখতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অনার্স, মাস্টার্স ও এমফিল এ পড়াশােনার সুবাদে বাংলা ভাষাটা শেখা ও লেখার প্রতি আকর্ষণ বাড়ে আরাে। তারপর সংসারের ঝক্কি সামলে মাঝেমধ্যে ফেসবুকে টুকিটাকি লেখা শুরু করেন। সেখানে বেশ কয়েকজন কবি ও লেখক দ্বারা আরাে অনুপ্রানিত হয়ে নিয়মিত হয়ে পরেন নিজের লেখায়ও। সদালাপী ও সদা হাস্যোজ্জ্বল এই মানুষটির কবিতা বিভিন্ন পত্রিকা ও বইতে স্থান পেলেও ‘অভিমানী ক্ষণই তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ।