কোন বইয়ের মুখবন্ধ লেখার যোগ্যতা আমার এখনও হয়ে ওঠেনি। তবু একটা অপচেষ্টা করছি। তবে এটা যতটা মুখবন্ধ তার চেয়ে বেশি লেখক সম্পর্কে বলবার চেষ্টা। আমি মনে করি একজন লেখকের জীবন কতটা বিচিত্র, তার দেখার দৃষ্টি কতটা প্রখর, তার বোধের জায়গা কতটা গভীর তার উপর নির্ভর করে তার লেখার মান। এই বইয়ের রচয়িতা নিকুল কুমার মন্ডল আমার বাল্যবন্ধু। তার জীবন ও দর্শন খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। অজস্র ঘাত-প্রতিঘাত, চরাই-উতরাই, দুঃখ-বেদনায় পরিপূর্ণ এক বিচিত্র জীবন আমার বন্ধু নিকুলের। অজস্র মানুষের সাথে তার মেশার সুযোগ হয়েছে। কাছ থেকে দেখেছে নানা রঙের মানুষের নানা রকম জীবন। ছোটবেলা থেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার কণ্ঠস্বর ছিল প্রতিবাদী। কখনও শক্তিতে হেরে গেলেও প্রতিবাদে পিছপা হয়না সে। তার দর্শন, লেখার ধরণ একেবারের ভিন্নতর। ওর লেখা পড়লে মস্তিষ্কের গভীর কোথাও টোকা পড়ে, ভাবনার উন্মেষ হয়। নিশ্চিত বলতে পারি এই বই পড়তে পড়তে একজন পাঠক অনেক বার পড়া থামিয়ে ভ্রু কু্ঁচকে ভাবতে বসবেন। পাঠক মাত্রই ভিন্ন স্বাদের খোঁজ করেন। এখানে যা পরিপূর্ণরুপে পাওয়া যাবে। নিকুলের লেখার একটা আলাদা সিগনেচার আছে। কিছুদুর পড়ার পর বলে দেওয়া যায় লেখাটি নিকুলের। সমাজের নানা অসঙ্গতি নিকুলকে গভীরভাবে নাড়া দেয়, তাই ওর লেখাতে সমাজের অসঙ্গতিগুলোই উঠে আসে দারুণভাবে। এই বইটির পরতে পরতেও সেই নির্যাস পাবেন পাঠকেরা। এটি নিকুলের প্রথম বই হলেও ওর লেখার সূচনা স্কুল জীবন থেকে। কখনও নাটক, কখনও কবিতা, কখনও গল্প আবার কখনও প্রবন্ধে নিকুলে মেলে দিয়েছে তার ভাবনার ডানা। আমি বিশ্বাস করি নিকুলের প্রথম বইটি পাঠক সমাদৃত হবে। এবং সাহিত্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পাবে। আমি সকল পাঠককে বলবো যদি ভিন্নতার স্বাদ নিতে চান তাহলে নিকুলের এই বইটি পড়ে দেখতে পারেন। ঠকবেন না। নিকুলের জন্য অশেষ ভালোবাসা ও শুভকামনা।