আজকের শিশু আগামীদিনের কর্ণধার। ছোটবেলা থেকে সে যা শেখে, বড় হয়ে জীবনে সেটাই প্রতিফলিত করতে চায়। বই শিশুর মনোজগতে গভীর প্রভাব ফেলে। বইয়ের চরিত্রগুলোর মতো সে নিজেকে সাজাতে চায়। কেমন হয়, যদি গল্পের চরিত্র হয় একজন মুসলিম শিশু? সে তার আশেপাশ থেকে প্রতিদিন নতুন কিছু শিখছে। নিজেকে গড়ে তুলছে। এমনই কিছু শিশুদের নিয়ে আমাদের গল্প সিরিজ। ‘গল্পে আনন্দে আদব শিখি‘ সিরিজের বইগুলো শিশুদের শেখাবে, ভাবাবে আর আনন্দ দেবে। তারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সৃষ্টি সম্পর্কে জানবে। প্রতিটি বইয়ে মুসলিম আদব শেখানো হয়েছে। আশা করি, শিশুদের সাধারণ এবং ইসলামী আদব শিক্ষায় বইগুলো অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি প্রতিটি বইয়ে এক্টিভিটি পেইজও আছে যা তাদের সৃজনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করবে। এই বইগুলো শায়খ আহমাদুল্লাহ পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং শিশুদের জন্য উপকারী বলে মতামত দিয়েছেন। প্রতিটা বইয়ের বর্ণনা: ফুলের হাসি : ফাতিমা দাদুভাইকে বাগানে বীজ রোপণ করতে সাহায্য করে। সে টবের মাটিতে একটা কালো বীজ বপন করে। টবটি তার খাটের নিচে অন্ধকারে রেখে দেয়। প্রতিদিন যত্ন করে বীজকে নানা রকম খাবার খাওয়ায়। তবুও বীজ থেকে চারাগাছ বের হয় না। একদিন সে রাগ করে জানালা দিয়ে টবটা ছুঁড়ে মারে। তারপর ঘটে একটা অবাক করা ঘটনা। তোমরা কী জানতে চাও কী ঘটেছিল? এই গল্পের মাধ্যমে শিশুরা কখন ‘সুবহানা আল্লাহ’ বলতে হয় তা শিখবে এবং বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করবে। বীজ থেকে কীভাবে গাছ হয়, গাছ বড় হবার উপাদান কী কী সে সম্পর্কেও জানতে পারবে। আম কুড়াতে সুখ: ফাতিমা মামা বাড়ি বেড়াতে আসে। সেখানে একজন ফল বিক্রেতা গরিব ছেলে আলির সাথে দেখা হয়। মামা তাকে আদর করে বসান, খেতে দেন। কেন মামা আলিকে ভালোবাসেন? ফাতিমা উত্তর খুঁজতে থাকে। এই গল্পের মাধ্যমে শিশুরা খাওয়ার আদব শিখবে এবং বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করবে। এতিমের সাথে কেমন আচরণ করতে হয়, তা-ও জানবে। এছাড়াও দেশি বিদেশী, টক-মিষ্টি-রসালো নানা ধরণের ফল চিনবে। হাতির পিঠে একদিন: একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে ফাতিমার ঘুম ভেঙে যায়। সেদিন সকালে সে দাদুর হাত ধরে চিড়িয়াখানায় যায়। সেখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার চমৎকার সব সৃষ্টি দেখতে পায়। দিন শেষে তার স্বপ্নটা কি সত্যি হয়েছিল? এই গল্পের মাধ্যমে শিশুরা কখন ‘মা শা আল্লাহ’ বলতে হয় তা শিখতে পারবে। প্রতিটা প্রাণীর বর্ণনা তাদের শেখাবে, ভাবাবে এবং আনন্দ দেবে। খালামনির উপহার : ফাতিমা সবজি খেতে চায় না। তাই সে খুব দুর্বল হয়ে পড়ে। মাদরাসার স্পোর্টস ডেতে দৌড়াতে গিয়ে পড়ে যায়। বাবা তাকে খালামনির বাড়িতে সাত দিনের জন্য রেখে আসেন। এই সাতদিনে সে কী শিখল? খালামনি কি তাকে সবজি খাওয়াতে পেরেছিল? এই গল্পের মাধ্যমে শিশুরা উপহার দিলে কী বলতে হয় শিখবে এবং বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করবে। সাতবারের নামসহ নানা রকম পুষ্টিকর সবজি সম্পর্কে জানবে। সবজি খাওয়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে। চলছে গাড়ি মামা বাড়ি: ফাতিমা খুব খুশি। ছোট মামার সাথে মামা বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছে। যাত্রাপথে তারা নানা ধরণের যানবাহনে চড়ে। কখনো রেলগাড়ি, কখনো বাস, কখনো বা নৌকা। মামা বাড়িতে পৌঁছে সে অবাক হয়ে যায়। মামাতো ভাই-বোনেরা তার জন্য একটা মজার গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। কী সেই মজার গাড়ি? এই গল্পের মাধ্যমে শিশুরা কখন ‘ইন শা আল্লাহ’ বলতে হয় শিখবে এবং বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করবে। সড়কপথ, নৌপথ আর আকাশপথের বিভিন্ন যানবাহনের নাম শিখবে।
ড. উম্মে বুশরা সুমনা, জন্ম গাইবান্ধায়। পিতা মুহম্মদ মকবুল হোসেন; মাতা নুরজাহান আক্তার। শিক্ষক পিতার অনুপ্রেরণাতেই লেখালেখিতে আসা। গাইবান্ধা সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি এবং গাইবান্ধা সরকারী মহিলা কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী অনুষদে ভর্তি হন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী অনুষদের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসী ও ফার্মাকোলজী ডিপার্টমেন্ট থেকে পি.এইচ.ডি ডিগ্রী লাভ করেন। বর্তমানে একটি বেসরকারী ইউনিভার্সিটির ফার্মেসী ডিপার্টমেন্টে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে কর্মরত আছেন। ছোটবেলা থেকে সাহিত্যের প্রতি তার আগ্রহ ছিল। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় ডেইলি স্টার পত্রিকার তার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। দৈনিক যুগান্তর, ইত্তেফাক, নয়া দিগন্ত, কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, জনকণ্ঠসহ বেশ কিছু জাতীয় পত্রিকায় আর ব্লগে বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ের উপর তার লেখা কলাম এবং গল্প প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৮ সালের একুশে বইমেলায় ‘বলয় ভাঙার গল্প’ নামে প্রথম গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। শিশুদের পাঠ্যপুস্তকের অতিরিক্ত চাপ নিয়ে লেখা কলাম ‘আমাকে একটু ভালোবেসে পড়াও’ এর জন্য দৈনিক ইত্তেফাক দ্বারা তিনি পুরস্কৃত হন। ২০২০ সালে শিশু-কিশোরদের মানবীয় গুণাবলী বিকাশের জন্য তার লেখা ছয় খন্ডের ‘আমি হতে চাই’ সিরিজ প্রকাশিত হয়। বইগুলো সরাসরি উপদেশ মূলক নয়। বইয়ের গল্পগুলো শিশুদের আনন্দ দিবে সাথে শিক্ষণীয় কিছু মেসেজও পাবে। গল্পগুলো শিশুদের সত্যবাদিতা, পরোপকারিতা, উদারতা, সহনশীলতা, পরিচ্ছন্নতা, কৃতজ্ঞতাবোধ ইত্যাদি মানবিক গুণাবলি শিখতে উৎসাহিত করবে এবং শিশুদের মানবিক বোধ সম্পন্ন আলোকিত মানুষ হতে সাহায্য করবে।