আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নীলাঞ্জনা শোন’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ সালে। জীবনসাথী মো. ইউসুফউল্লাহ্র পরামর্শ, আগ্রহ এবং সহযোগিতায় নিরীক্ষণ অভিপ্রায়ে ঢাকাইয়া কুট্টি ভাষায় লিখিত চারটি কবিতা ওই গ্রন্থটিতে সংযোজন করি। মনে ছিল দ্বিধা, সংশয়-কী হবে পাঠকের প্রতিক্রিয়া-এই কবিতার সংযুক্তিতে! বইটি প্রকাশের পর ঢাকাইয়া ভাষার ওই কবিতাকটির বিষয়ে পাঠকের ব্যাপক সাড়া আমার মনোবল এবং উৎসাহ দুই-ই বাড়িয়ে দেয়। আমি অনুপ্রাণিত হই ঢাকার এই ভাষায় লিখা সম্পূর্ণ কাব্যগ্রন্থ ‘তারাবানু এবং অন্যান্য কবিতা’ প্রকাশে। আশাতীত পাঠকপ্রিয়তা এবার এই ভাষায় কাজ করার প্রতি আমার আগ্রহ আরো এক ধাপ বাড়িয়ে দেয়। অকৃত্রিম পাঠকপ্রিয়তা ও চাহিদার প্রেক্ষিতে দুই বৎসর পরই ২০০৮ সালে নতুন কিছু কবিতা সংযোজন করে ‘তারাবানু এবং অন্যান্য কবিতা’ কাব্যগ্রন্থের বর্ধিত সংস্করণ ‘দিলের টুকরা’ প্রকাশ লাভ করে। সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্তে¡ও কিছু ত্রæটি বিচ্যুতি বই দুটোতে থেকেই যায়। আমি আরো সচেষ্ট ও সাবধানী হই এই ভাষাটির উপর কাজ করতে। ঢাকাইয়া ভাষার কবিতার প্রতি পাঠকের গভীর টান ও ভালবাসা আমাকে অহরহ অনুপ্রাণিত করতে থাকে। আমি এই ভাষার চর্চা এবং প্রয়োগে আরো উদ্যোগী এবং সচেতন হই। এরই মধ্যে ২০১০ সালে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি রাজধানী ঢাকার ৪০০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে প্রকাশ করে ‘ঢাকাই উপভাষা প্রবাদ-প্রবচন কৌতুক ছড়া’ গ্রন্থটি। উক্ত গ্রন্থটিতে ড. রাজীব হুমায়ুন (প্রয়াত) এবং আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ সাহেব তাঁদের মূল্যবান প্রবন্ধে ব্যাপকভাবে আমার ঢাকাইয়া (কুট্টি) ভাষার কাব্যগ্রন্থ দুটির কবিতার পর্যালোচনা করেছেন। সম্মানিত মহোদয়গণ তাঁদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনার মাধ্যমে আমার চৈতন্য করেছে আরো শাণিত। আমি সাহসী হয়েছি পরবর্তী কাব্যগ্রন্থ ‘তালাশ’ রচনায়। এরপর পাঠকের আন্তরিক আগ্রহ, তাগিদ এবং সাহিত্যের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা থেকেই ‘ঢাকাইয়া ভাষার কবিতাসমগ্র’ রচনায় প্রয়াসী হই।