কবিতা লেখা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি নয়। প্রথমে প্রয়াস, তারপর অভ্যাস এবং সর্বোপরি নিজেকে জানবার অন্তঃক্ষরা চেষ্টা। মোতালেব খান মাটি থেকে উঠে আসা একজন আত্মসজাগ মানুষ। এটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই। খোলা জানালা নয়, নয় উন্মুক্ত বাতায়ন, তিনি কবিতার বইয়ের নাম দিয়েছেন ‘অনিরুদ্ধ বাতায়ন’। বাংলা ভাষার ওপর দখল, শব্দচয়নের ক্ষমতা এবং সৌন্দর্যবোধ থাকলে এ রকম শ্রুতিনন্দন একটি নামকরণ সম্ভব। আধুনিক কবিতার জন্মলগ্নে বোদলেয়ার বলেছিলেন, ইটের ওপরে ইট বসিয়ে যদি সুরম্য অট্টালিকা তৈরি করা যায়, তবে শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে কেন কবিতা হতে পারবে না। বাংলা আধুনিক কবিতার প্রথম দিকে এ রকম প্রচেষ্টা ছিল; অর্থ বোধগম্য হতে চাইত না। তখন রবীন্দ্রনাথের দোহাই পেড়ে শঙ্খঘোষ বল্লেন, ‘কবিতার দায়িত্ব নয় মানে বোঝানোর, কবিতা কেবল প্রাণিত করতে জানে।’ আধুনিক কবিতার সে যুগ আমরা পেরিয়ে এসেছি। স্নেহাস্পদ মোতালেব খানের কবিতা আধুনিক পর্যায়ের, সুখপাঠ্য ও হৃদয়গ্রাহী। দ্রোহ, প্রেম, প্রকৃতি, নিঃসর্গ নিয়ে ফল্গু-ছন্দোবদ্ধ কবিতামালা মননে-মানসে, চিত্রকল্পে অনবদ্য। মধুমতী নদীর তীরে পানি-আলো-বাতাসে সাঁতারকাটা মানুষ মাটি থেকে আর কত দূরে যেতে পারে? ‘চাতানো গতর’, ‘ছাতিমের সৌরভ’ ইত্যাদি শব্দচয়ন অনেক কবিতাকে ঋদ্ধ করেছে। পড়তে পড়তে মনে হয়েছে, এক কবিতা টেনে নিয়ে ধরিয়ে দেয় পরের কবিতার হাত। শেষে বলি, মোতালেব খান কবি। কবিতা তাঁর জীবনের সম্পদ হয়ে উঠুক, জীবন হয়ে উঠুক কবিতা সুন্দর।