সর্প পূজার নৃত্য-গীতের তালের মতো একটি দুর্বোধ্য বাক্য কানে ভেসে আসছিল হিড়িম্বর। ধাবমান শেয়ালের মতো এক লাফে চাঁচাড়ির ঘর থেকে বাইরে এসে দাঁড়ায় যুবক হিড়িম্ব। তার মনের ভেতর চাঞ্চল্য হঠাৎ কুয়াশা ভেজা ঘাস হয়ে যায়। কিছুটা ভয় কিছুটা কৌতূহলে বাড়ির পাশের পিঁপুলের ঝুলন্ত লতায় নিজেকে আড়াল করে দাঁড়ায়। সে দেখে হাতে লম্বা লাঠি, কাঁধে ঝোলা, কার্পাস সুতোয় তৈরি পোশাক পরা একদল মুণ্ডিত মস্তক বৌদ্ধ শ্রমণের সামনে হাঁটছে বিচিত্র চেহারার এক লোক। লোকটি খর্বকায়, কুতকুতে চোখ, গায়ের রং হলদেটে, পরনে সেলাই ছাড়া লম্বা রেশমি বস্ত্র। সেই লোকটি উচ্চারণ করছিল, 'বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি।' শ্রমণেরা তার নাক্য অনুকরণ করছে মাত্র। ওরা হাঁটছিল প্রাচীন পথ ধরে। এ পথ ধরেই কর্ণসুবর্ণের বণিকেরা গাধার পিঠে পণ্য সাজিয়ে সুবর্ণবীথি নগরে বাণিজ্য করতে যায়। হিড়িম্ব ভাবে ওরা কি সুবর্ণ বিহারের শ্রমণ নাকি রক্তমৃত্তিকা বিহারের? মহাঔৎসুক্যে সে আপন দিগম্বর শরীরের দিকে তাকায়। তার পরনে ছিল নেংটি যা ঘরে বোনা ক্ষৌম বস্ত্র মাত্র। শ্রমণেরা যখন উঁচু-নিচু টিলা ভেঙে এগুচ্ছিল তখন সে তাদের জম্মু ফলের মতো চলমান ন্যাড়া মাথা ভিন্ন আর কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না। শ্রমণ দলটি এক সময় তাদের পল্লীর সীমানা পেরিয়ে ঘন বুনো পথে হাঁটতে থাকে।
হরিপদ দত্ত। জন্ম : ২ জানুয়ারি ১৯৪৭ খ্রি. গ্রাম : খানেপুর, উপজেলা : পলাশ, জেলা : নরসিংদী। উল্লেখযোগ্য উপন্যাস: অজগর, জন্মজন্মান্তর, দ্রাবিড় গ্রাম, মোহাজের, চিম্বুক পাহাড়ের জাতক (৪ খণ্ড) প্রভৃতি। গল্প সমগ্র, প্রবন্ধ সমগ্র ও শিশু-কিশোর সমগ্র প্রকাশিত হয়েছে। পুরস্কার : বাংলা একাডেমি পরিচালিত সাদ’ত আলী আকন্দ সাহিত্য পুরস্কার ২০০১ এবং বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০০৬ (উপন্যাস)।