কবি কাব্যক্ষুধাকে ধারণ করে শিল্পের সুষমায় বিমূর্তকে মূর্তরূপে বিকশিত করেন। কবিতাকে শিল্প করে তোলে উপমা। জীবনানন্দের চিত্রকল্পগুলো শিল্প ও জীবনের সৌন্দর্যকে চিত্রিত করেছে। উপমার সযতন বিন্যাসে নজরুলের কবিতার চরণগুলো হয়ে উঠে অপার্থিব। পদ্য বা কবিতার আলাদা নামকরণের ব্যাখাও দিয়েছেন পণ্ডিতজনেরা। পদ্য হলো গদ্যের বিপরীত। যে রচনায় নিয়মিত ছন্দ আছে, প্রতি লাইনে মাত্রার পুনরাবৃত্তি থাকে সে ধরনের লেখা পদ্য। পদ্য হলো অগভীর, হালকা যা চিরন্তন নয়। অন্যদিকে কবিতা হলো গভীর, রহস্যময় ও চিরন্তন। ভাষা, ছন্দ, অলংকার সবকিছু মিলেই কবিতা হয়ে ওঠে। সৌন্দর্যই হৃদয়কে আন্দোলিত করে, বিমোহিত করে। প্রকৃতিতে ছড়ানো ছিটানো নানা সৌন্দর্য মুগ্ধ করে, তদ্রুপ অলঙ্কার সাহিত্যে বিশেষ করে কবিতায় সৌন্দর্যকে তুলে ধরে। কবিতার অলঙ্কারের ব্যবহার অত্যাবশ্যকীয়; যার মাধ্যমে একটি কবিতা অলঙ্কারের আচ্ছাদনে আচ্ছাদিত হয়ে তার শিল্পিত রূপ এবং নান্দনিকতাকে ফুটিয়ে তুলে সার্বজনীন হয়ে উঠে। রবীন্দ্রনাথের কবিতা কিংবা গানের ভেতর দিয়ে তাঁর সৃষ্টির ভুবন দেখবার চেষ্টাই তাঁকে চেনবার বা জানবার পথ। রস বোধের মধ্যে দিয়ে, অন্তরঙ্গে প্রবেশ করা আর রূপের রেখার মধ্য দিয়ে তাঁর বহির্জগৎকে অবলোকন করা সম্ভব। শিল্প সাহিত্যের নন্দন তাত্ত্বিক বিচার-বিবেচনার ধারাটি প্রাচীন। বিশেষত নিসর্গ কখনো হয়ে ওঠে সৃষ্টির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রেরণা। মানবসভ্যতার বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় শিল্প ও সাহিত্য সৃষ্টিতে উভয় ক্ষেত্রেই কথাগুলো সত্য। যেমন সাহিত্যে তেমনি স্থাপত্যে-ভাস্কর্যে বা চিত্রকলায়। তবে এক্ষেত্রে সাহিত্যসৃষ্টিই প্রধান বিবেচ্য বিষয়। একটি কবিতাকে শক্তিশালীভাবে উপস্থাপন করার মধ্যেই প্রকৃত সার্থকতা নিহিত। নতুন নতুন শব্দ তৈরি করা সৃজনশীল কাজ। প্রতিটি ভাষা অন্য ভাষা থেকে আলাদা। ব্যবহারিকভাবে ‘শব্দ’ই প্রতিটি ভাষার অপরিহার্য উপাদান। শব্দ যথার্থভাবে উপযুক্তভাবে শাব্দিক হয়ে ওঠা, বহনমাধুর্যতা ধারণ করা, অপরাপর শব্দ পরম্পরার সাথে সংযুক্তিকরণের ক্ষমতা নিয়ে বিকশিত হওয়া। শিল্প সর্বসাধারণের জন্য নয়। তদ্রুপ কবিতাও সর্ব সাধারণের জন্য নয়। একজন কবি প্রকৃতপক্ষে একজন শিল্পী। তিনি তাঁর চিন্তা, চেতনা, অভিজ্ঞতা, আবেগ, শিল্পিত ভাষায়, শিল্পিত পরিবেশের মধ্য দিয়ে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেন। তাই তা গ্রহণের সামর্থ সব পাঠকের থাকার কথা নয়। তবে পৃথিবীর যে কোনো ভাষার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সহজবোধ্যতা বা প্রাঞ্জল্য। কবিতা প্রতিবেদন রচনা নয়; বরং পরোক্ষ ভঙ্গি কবিতার গভীর বিষয়ের আঙিনায় প্রবেশ করে আচ্ছাদন তৈরি করে। ফলে কবির চিন্তাপ্রসূত বিষয় এর স্বরূপ পাঠকের কাছে অবিকৃত অবস্থায় নাও পৌঁছতে পারে। কবির চিন্তাঘনিষ্ঠ মূল বিষয়ের পরিপার্শ্ব দিয়ে পাঠক হাঁটাচলাও করতে পারেন। পাঠক কোনো কবিতা পড়ে ভালো লাগার অনুভূতিতে উদ্বেলিত হতে পারেন। অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা, মনীষা, অধ্যয়ন ও কল্পনার মিথস্ক্রিয়ায় সৃজিত হয় শ্রেষ্ঠ সাহিত্য। পাঠ ও যাপিত-জীবনের অভিজ্ঞতা যাঁকে প্রাজ্ঞ করে তুলেছে, কল্পনা যাঁকে করেছে কবি, তাঁর কবিতায় বুদ্ধির দীপ্তি এবং মনীষার ছাপ থাকবেই। কবি বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা ও কল্পনার সমন্বয়ক। কবি ইতিহাস-ভূগোল-রাজনীতি-অর্থনীতি-ধর্ম ও সমাজ সচেতন। আধুনিক যুগের জটিলতাকে পাশ কাটিয়ে সময়ের জটিল আবর্তন শনাক্ত করাও কঠিন। অন্তরের চিন্তা-চেতনা যখন ভাবানুভূতির বর্ণবৈচিত্রে যথোপযুক্ত শব্দবিন্যাসে সুবিন্যস্ত চিত্রে ও ছন্দিত রূপে উপস্থাপিত হয় তখনই হয়ে ওঠে কবিতা। কালের বিবর্তনে, অতিক্রান্ত সময়ের সন্ধিক্ষণে উৎকৃষ্ট কবিতা নির্মাণের জন্য বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে প্রায় সব ভাষার বিশিষ্ট কবিরা তৈরি করেছেন সুনির্দিষ্ট ও সুবিন্যস্ত নিয়ম। বাংলা কবিতাকেও অন্যান্য ভাষায় রচিত কবিতার মতো বাঁধা হয়েছে ছন্দের শৃঙ্খলে। আর এক পর্যায়ে ভেঙেও দেয়া হয়েছে সেই শৃঙ্খল, কিন্তু ভাঙার সেই প্রক্রিয়াও তৈরী করেছে নতুন ধ্বনি মাধুর্য।
সৈয়দ রনো ১৯৭৮ সালের ১ জানুয়ারি মানিকগঞ্জ জেলাধীন ঘিওর উপজেলার বড়টিয়া ইউনিয়নের হিজুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা- আলহাজ সৈয়দ আব্দুল লতিফ, পেশায় তিনি স্কুল শিক্ষক এবং মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্রার ও কাজী এবং মাতা- আলেয়ার নাহার হাওয়া। পরিবারে তিন ভাই এবং পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন কেটেছে নিজ গ্রাম হিজুলিয়ায়। ঘিওর উপজেলার আঞ্চলিক উচ্চ বিদ্যালয়,ফুহাড়া থেকে এসএসসি ও ঘিওর সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর উচ্চশিক্ষা প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল এল বি, শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলায় এম.এ. পাস করেন। এরপর তিনি আইনবিদ্যায় স্নাতক এল.এল.বি ও বি.এড ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম এড পাশ করেন। ধর্মের প্রতি দুর্বল থাকায় তিনি আরবি শিক্ষায় আলিম পাশ করেন। ২০১৩ সালে লোকসংস্কৃতি -তে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম এড ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবন : বাল্যকাল থেকেই তিনি সাহিত্য অনুরাগী। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় প্রথম কবিতা প্রকাশ হয় মানিকগঞ্জের স্থানীয় আলোর বাণী পত্রিকায়। এরপর থেকে নিয়মিত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তার কবিতা, ছড়া, পদ্য, গল্প, প্রবন্ধ, ভ্রমন কাহিনী, নিবন্ধ, রম্যরচনা প্রকাশ হতে থাকে। মঞ্চ নাটক লিখে এবং অভিনয় করে নব্বই দশকে সুনাম এবং সুখ্যাতি কুড়াতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি অনুশীলন সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন বর্তমানে যার নাম পরিবর্তন হয়ে অন্যধারা সাহিত্য সংসদ হয়েছে, এই সংগঠনের তিনি প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ছাব্বিশ বছর যাবত সাপ্তাহিক অন্যধারা যা বর্তমানে দৈনিক অন্যধারা পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়া বর্তমানে জাতীয় দৈনিক আলোকিত প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক।