শ্যামশ্রী রায় নামে সত্যিই একজন আছেন যিনি এই বইয়ের নামগল্পের অনুপ্রেরণা। তিনি আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু এবং এক অর্থে সহপাঠী। স্নাতক হওয়ার পর আমার স্ত্রী পার্লিয়া ও বন্ধু শ্যামশ্রীসহ সাত বন্ধুতে মিলে একটা সফটঅয়্যার ফার্ম দিয়েছিলেন। প্রথম অফিস ছিল মহাখালীর ডিওএইচএস-এ। আমি প্রায়ই যেতাম। বেশিরভাগ সময় অফিসে গিয়ে চা খেয়ে একা ফিরতাম। কখনো ব্যতিক্রম হতো। অফিস শেষে আমরা হাঁটতে বের হতাম। সেসব দিন আমরা তিনজন প্রায়ই একটা বিশেষ রাস্তায় চলে আসতাম। রাস্তার নির্জন প্রান্তে একটা নিঃসঙ্গ সূর্যদীঘল বাড়ি ছিল। দোতলা। দ্বিতীয় তলায় বড় একটা অর্ধচাঁদ আকৃতির বারান্দা ছিল, নান্দনিক, রাজসিক। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখতাম, বারান্দার পেছনটা ক্রমশ ভুতুড়ে, অন্ধকার। একইসঙ্গে আমাদের অবাক করত বাড়ির খোলা ফটক। বহুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরও কাউকে আমরা ঢুকতে বা বের হতে দেখতে পেতাম না। বাড়িটা ছিল যেন শুধু রহস্যেরই আবাস। বুঝি ওখানে কোনো মানুষ ছিল না। বাড়িটা প্রথম দেখিয়েছিলেন শ্যামশ্রী রায়। নির্জন রাস্তায় আমার মনে অনেক বাক্যই জন্ম নিতো। একদিন একটা বাক্য প্রকৃতিদেবী মনে এনে দিলেন। বাক্য অথবা গল্পের রুহ। ‘জাদুকরের গোপন শিশি কাত হয়ে সন্ধ্যা বের হয়ে আসে।’ শেষ বিকেল ফুরিয়ে সন্ধ্যার সেই নির্জন বাড়ি, তার সামনে বিভ্রান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শ্যামশ্রী রায়, আমরা, আর সেই বাক্য, এই সমস্ত মিলে একটা গল্পের আত্মা যেন তৈরি হয়েছিল যার শরীর তখনো অনুপস্থিত। আমি এক রাতে বাড়ি ফিরে কাগজ কলম নিয়ে সেই শরীর তৈরি করতে বসলাম, মহানিয়ম সহায়। লেখা হলো, এক সন্ধ্যায় শ্যামশ্রী রায়। বইয়ে আরো থাকছে আন্দালুসিয়া, প্রেমিক, শ্রীপুরের যাত্রী, রমনাসহ মোট আটটা গল্প। এক সন্ধ্যায় শ্যামশ্রী রায়কে তাদের নেত্রী মেনে বইয়ের নাম রেখেছি। আমি প্রকৃতির রহস্যঘন আধ্যাত্মিকতার আজন্ম মোহগ্রস্ত পূজারি। লেখায়, আঁকায় কেবল মোহটুকুই আনতে পারি। মূল অধ্যাত্মিকতা তার রস-রহস্য নিয়ে অধরা। কোনোদিন কি সে ধরা দেবে।