"রহস্যময়ী" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ রাত সােয়া বারােটায় কলিংবেল বাজাবার সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে যাবে এতটা ভাবতেই পারেনি মনজু। যেদিন স্টুডিও রেকর্ডিং থাকে সেদিন বাড়ি ফিরতে কখনও কখনও এতটা রাত হয়। মনজুদের বাসার নিয়ম হচ্ছে দশটা সাড়ে দশটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়া। ভাইয়া সকাল সকাল কাল ঘুমােন সকাল সকাল ওঠেন। তাছাড়া সকালবেলা পিংকির স্কুল। বাধ্য হয়েই সকালবেলা উঠতে হয় সবাইকে। কেবল মনজুর নয়। এক ফ্যামিলিতে থেকেও মনজুর জীবনযাপন সম্পূর্ণ আলাদা। রাত করে বাড়ি ফিরলে ফ্ল্যাটের দরজা খুলে দেন ভাবী। তাও টং টাং করে অনেকক্ষণ কলিংবেল বাজাবার পর। আজ একবার বাজতেই দরজা খুলে গেল! কী ব্যাপার! মনজু হাসি হাসি মুখ করে কিছু একটা বলতে যাবে তখন দ্বিতীয় বারের মতাে অবাক হলাে। দরজা খুলে দিয়েছে লীলা। আশ্চর্য ব্যাপার। বাইরে দাঁড়িয়েই মনজু বলল, তুমি! লীলা হাসল। হ্যাঁ আমি! তুমি এত রাত অব্দি জেগে আছ? হ্যাঁ আছি। কেন? কেন আবার! মনজু খুবই সিরিয়াস মুখ করে বলল, আমার জন্য! লীলা হাসল। জ্বী না। আপনার জন্যে রাত জেগে বসে থাকবার কোনও দরকার আমার নেই। তাহলে কেন জেগে আছ? ঘুম আসেনি বলে। কেন ঘুম আসেনি? লীলা বিরক্ত হওয়ার ভান করল। বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বললে কিন্তু দরজা বন্ধ করে দেব। ঢুকতে দেব না। ওরে বাপরে। মনজু প্রায় লাফ মেরে ভেতরে ঢুকল। সঙ্গে সঙ্গে দরজা বন্ধ করে দিল লীলা। মনজুর কাঁধে কালাে চমৎকার একটা ব্যাগ। বেশ ঢােলা সাদা একটা শার্ট পরে আছে। শার্টের হাতা কনুই অব্দি গােটানাে। বাঁ হাতে কালাে বেল্টের ঘড়ি। গলায় প্যাচানাে সােনার একটা চেন। এই ধরনের চেন ছেলেমেয়ে সবাই খুব পরছে আজকাল।
১৯৫৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বিক্রমপুরের মেদিনীমণ্ডল গ্রামে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের জন্ম। লেখনীশক্তির পাশাপাশি তার রয়েছে নাট্যরচনায় পারদর্শিতা। বর্তমানে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদপত্র ‘কালের কন্ঠ’-এর সম্পাদক পদেও নিয়োজিত রয়েছেন তিনি। শিশুতোষ গল্প দিয়ে সাহিত্য অঙ্গনে এ গুণী লেখকের প্রবেশ, যা প্রকাশিত হয়েছিলো ‘কিশোর বাংলা’ নামক এক পত্রিকায়। তবে পাঠকের নজরে পড়েছিলেন ‘সজনী’ নামের ছোট গল্প লিখে। খুব অল্প বয়সে তিনি লেখালেখিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। ফলে তার লেখার বিষয়বস্তুতে কোনো জটিল সমীকরণের দেখা মিলতো না, পাঠককে বিমল আনন্দ দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমদিকে তিনি ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ বিষয়গুলোকে পরিহার করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে ইমদাদুল হক মিলন এর বই সমূহ-তে মুক্তিযুদ্ধ, হাজাম সম্প্রদায়ের জীবন, প্রবাসী শ্রমিকদের দুঃখগাথা, পাটচাষী, গ্রাম বাংলার সমাজের এক নিখুঁত চিত্রও ফুটে উঠতে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে লেখকের বক্তব্য, তিনি নিজেই লেখার এরকম বিপরীতধর্মী দুটি ধরন আপন করে নিয়েছেন, আর এক্ষেত্রে তার অণুপ্রেরণা ছিলেন সমরেশ বসু। ইমদাদুল হক মিলন এর বই সমগ্র-তে স্থান পেয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক নাটক এবং প্রায় দু’শো উপন্যাস। শিশুতোষ গল্প এবং ভৌতিক উপন্যাস রচনাতেও তার জুড়ি নেই। এই বৈচিত্র্যপূর্ণ সৃষ্টিশীলতার কারণে বাংলা উপন্যাস ইমদাদুল হক মিলন এর কাছে কৃতজ্ঞ। শুধু বাংলাদেশ না, পশ্চিমবঙ্গেও তার সমান জনপ্রিয়তা রয়েছে। দুই বাংলায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী তার বহুল পঠিত উপন্যাস হলো ‘নূরজাহান’। এছাড়াও ইমদাদুল হক মিলন এর উপন্যাস সমগ্র বিভিন্ন পাঠকপ্রিয় উপন্যাসে ঠাসা। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো ‘জিন্দাবাহার’, ‘নিঝুম নিশিরাতে’, ‘যাবজ্জীবন’, ‘কালাকাল’, ‘কালো ঘোড়া’, ‘ভূমিপুত্র’, ‘পরাধীনতা’, ‘কে’, ‘তাহারা’, ‘ভূতের নাম রমাকান্ত কামার’ ইত্যাদি। দেশি-বিদেশি নানা সম্মানজনক পুরস্কারের পাশাপাশি ২০১৯ সালে তিনি একুশে পদক পান।