কৃষিপণ্য ও খাদ্যসামগ্রী মানুষের খাবার ও জীবিকার উৎস হিসেবে কাজ করে। মানুষের উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্যসমূহের মধ্যে কিছু পণ্য খাদ্য উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় আবার কিছু পণ্য শিল্পের কাচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে মানুষ খাদ্যসামগ্রী হিসেবে কোনটি সরাসরি গ্রহণ করে অথবা কোনটি প্রক্রিয়াজাত করে গ্রহণ করে। আবার বর্তমান সময়ে উৎপাদিত কৃষিপণ্য ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য সরাসরি সংরক্ষণ করে অথবা প্রক্রিয়াজাত করে সংরক্ষণ করে। বর্তমানে কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণে নানা ধরনের বৈজ্ঞানিক ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কারণে কৃষিজাত পণ্য ও খাদ্যসামগ্রী প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। বাংলাদেশে যথাযথ সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনার অভাবে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের একটি বড় অংশ সংগ্রহের পর থেকে বাজারজাতকরণের বিভিন্ন ধাপে নষ্ট হয়। কৃষিজাত পণ্যের সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্যাকেজিং, বাজারজাতকরণের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে এগুলোর সংগ্রহত্তোর অপচয় কিছুটা হলেও রোধ করা সম্ভব। গ্রামীণ কৃষক-কৃষাণীদের উৎপাদিত ফল, ফসল. সবজি ও মসলা প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন পদ্ধতির উপর প্রশিক্ষণ দিতে পারলে তারা সহজেই এগুলো থেকে বিভিন্ন রকম প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্যদ্রব্য বিশেষ করে আচার, চাটনি, জ্যাম, জেলী, ইত্যাদি তৈরি করতে পারবে। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে অথবা দলগতভাবে বিভিন্ন রকম প্রক্রিয়াজাত খাদ্য তৈরি ও সেগুলো বাজারে বিক্রি করে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতে পারবে। মূলত কৃষিজাত পণ্য ও খাদ্যসামগ্রীর নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য গবেষণা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রমের ওপর অধিকতর জোর দেবার ক্ষেত্রে এই বইটি কৃষক, উদ্যোক্তা, কৃষি ডিপ্লোমা ও পলিটেকনিক শিক্ষার্থী, ফুড টেকনোলজী ও ফুড এন্ড নিউট্রিশনের শিক্ষার্থীসহ বেকার যুবক, কৃষি কর্মী, গবেষক ও সম্প্রসারণ কর্মীদের প্রশিক্ষণের কাজে লাগবে। বইটিতে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ বিষয়ে সাধ্যমত আলোচনা করা হয়েছে। বইটিতে কৃষিজাত পণ্যের সংগ্রহোত্তর ক্ষতি কমিয়ে প্রক্রিয়াজাতকৃত ও সংরক্ষণ করার উন্নত প্রযুক্তি ও কলাকৌশল সহজ করে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। বইটিতে সবজি, সবজি বীজ ও ফল সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন খাদ্য তৈরি, খাদ্য হিসেবে সামুদ্রিক শৈবাল এর পুষ্টি গুণাগুণ, খাদ্যে রাসায়নিকের ব্যবহার, প্যাকেজিং ও হ্যাসাপ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠান যারা দীর্ঘদিন যাবৎ এই ধরনের প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ বিষয়ক বিভিন্ন কর্মকা-ে জড়িত রয়েছেন তাদের উদ্যোগে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রকার প্রকাশনা থেকে সংকলিত করে এই বইটি তৈরি করা হয়েছে। বইটিতে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও কৃষিজাত পণ্য ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীর প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কার্যক্রম বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখুক এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের। বইটি সংকলন ও গ্রন্থনায়, সম্পাদনায় এবং প্রকাশনার কাজে যারা আন্তরিকভাবে মনন, মেধা ও শ্রম দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। বইটি প্রকাশে ও মুদ্রণের বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। এরপরও ভুলত্রুটি থাকতে পারে। আশা করি পরবর্তী সংস্করণে আরো সুন্দর, শোভন, ত্রুটিমুক্ত ও বিজ্ঞানভিত্তিক করা হবে। বইটির মানোন্নয়নের বিষয়ে যেকোন পরামর্শ সাদরে গ্রহণযোগ্য। কৃষিবিদ মো. মোসারফ হোসেন মো. সুলতান মাহমুদ