কিছুদিন পূর্বেও মুড়ি তৈরি করতেন গ্রামের মা, খালা ও চাচীরা। এজন্য দরকার হতো জ্বলন্ত দুটি খড়ির বা মাটির চুলা। এছাড়া একটি মাটির পাতিল ও একটি মাটির কড়াই। কড়াইতে গরম করা হতো সিদ্ধ করা মুড়ি তৈরির চাল। এই চাল গরম করে পাশের কড়াইয়ে তপ্ত গরম বালিতে ঢেলে দিলে ফড়ফড় করে লাফিয়ে মুড়ি বের হতো। বর্তমানে চালের মিলের মতো মুড়ি তৈরির মিলও সারাদেশে বসেছে। এই সকল মিলে চাল গরম করে গ্যাসের চুল্লিতে তপ্ত বালির মধ্যে দিলে ব্লোয়ারের বাতাসে মুড়ি তৈরি হয়ে একপাশে পড়ে। এই মুড়ি গরম গলানো গুড়ে ঢেলে নেড়েচেড়ে ঠা-া করে মহিলারা সকলে মিলে মুড়ির মোয়া তৈরি করে। মুড়ির মোয়া সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার। ধান থেকে চাল, চাল থেকে মুড়ি, আখ থেকে গুড় এবং গুড় থেকে চিটেগুড়। এ হচ্ছে মুড়ি মোয়ার উপকরণ। মুড়ি মোয়ার নেই কোনো রাসায়নিক উপাদান। কিন্তু এই ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক খাবার বাংলার সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এই মোয়ার বাজার দখল করে নিচ্ছে বিভিন্ন ফাস্ট ফুড ও পিঠা। আলুপুরি, ডালপুরি, সিঙ্গারা, সমুচা, চটপটি ও ফুচকাসহ আটার তৈরি বিভিন্ন প্রকার মুখরোচক ও ক্ষতিকর খাবার। বর্তমানে মুড়ির মিলে বাণিজ্যিকভাবে এবং অটোমেটিক মেশিনে মুড়ি তৈরি হয় ফলে এটি একটি ব্যবসা তথা শিল্পে পরিণত হয়েছে। একইভাবে চিড়া ও খই সনাতন পদ্ধতিতে উৎপাদন না করে বিভিন্ন জায়গায় চিড়ার মিল বসেছে ও খই উৎপাদন করা হচ্ছে। মুড়ি, চিড়া ও খই শুকনো পুষ্টিকর খাবার। আপদকালীন সময়ে এ খাবার খুব কাজে লাগে। বায়ুরোধী অবস্থায় এগুলো রাখা হলে বহুদিন পর্যন্ত রেখে খাওয়া যায়। বইটি লিখা ও ছাপায় যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। তারপরেও কোনো ভুল থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করছি। কৃষিবিদ মো. মোসারফ হোসেন শামসুন নাহার বিলকিস