পদে পদে বাধা আছে বলে স্হানীয় লোকেরা বাধা বন বলত। সেটাই মানুষের মুখে আস্তে আস্তে বাদাবন নামে প্রচলিত হয়েছে। এই বনে যেমন রয়েছে অনেক হিংস্র প্রাণী তেমনি প্রতিকূল পরিবেশ। ডাঙ্গায় আছে বাঘ, শুয়োর, সাপসহ অনেক সরীসৃপ প্রাণী। পানিতে রয়েছে ভয়ংকর কুমির। সুন্দরবনে বিশেষ বৈশিষ্ট্য ম্যানগ্রোভ জাতীয় শ্বাসমূলীয় গাছ, যার মূল মাটির উপরিভাগে বেরিয়ে থাকে। এই মূলের কারণে বনে হাঁটাচলা করা অত্যন্ত কঠিন। এ ছাড়া এই বনে জোয়ার ভাটার কারণে দিনে দুই বার প্লাবিত হয়। জোয়ারের সময় বড়ো বড়ো নদী ও অসংখ্য ছোটো-বড়ো খালের পানি বনে ঢুকে পড়ে। তখন বনের অধিকাংশ এলাকা সমুদ্রের লবণাক্ত পানিতে তলিয়ে যায়। এজন্য সুন্দরবনে মিষ্টি পানির অভাব। কিন্তু প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য মিষ্টি পানির প্রয়োজন। সুন্দরবনে প্রাকৃতিকভাবেই অনেক খানাখন্দ বা ছোটো-বড়ো গর্ত রয়েছে। সেখানে যে বৃষ্টির পানি জমে থাকে সেটা পান করেই প্রাণীরা বেঁচে থাকে। তবে সেই পানি বন্য প্রাণীরা নোংরা করে ফেলে, তা মানুষের পক্ষে পান করা সম্ভব হয় না। বনে খাবার ও পান করার পানি উভয়েরই প্রচণ্ড অভাব। সুন্দরবনে বেড়াতে গেলে বা কাজে গেলে প্রয়োজনীয় পানি ও খাবার সাথে নিয়ে যেতে হয়। তারপরও সুন্দরবন সুন্দর, অদ্ভুত সুন্দর। বনের রং ও রূপ দিনের আলোতে ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে ঘিরে আবহমান কাল থেকে গড়ে উঠেছে মানুষের জীবন ও জীবিকা। সুন্দরবনের জেলে, বাওয়াল, মৌয়ালসহ সকল পেশার মানুষকে অনেক প্রতিকূলতা জয় করে জীবিকার সন্ধানে বনে নামতে হয়। কালজয়ী গাজি-কালু আর বনবিবির দোহাই দিয়ে জেলেরা বনে মাছ ধরতে যায়। প্রতিকূল পরিবেশ, সিডর আয়ালার মতো ঘূর্ণিঝড় এবং হিংস্র প্রাণীর কারণে তারা পরিবার থেকে একেবারে বিদায় নিয়ে জঙ্গলে প্রবেশ করে। এত প্রতিকুল পরিবেশের মধ্যেও বনজীবীদের মুখোমুখি হতে হয় ভয়ংকর বনদস্যুদের। সুন্দরবনে বেশ কয়েকটা বনদস্যুর দল গড়ে তুলেছিল ত্রাসের রাজত্ব। বনের পেশাজীবী ও আশেপাশের জনপদকে বনদস্যুরা তাদের হাতের পুতুল বানিয়েছিল। দস্যুদের নিয়মিত চাঁদা না দিলে জেলে, মৌয়ালদের তারা অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করত, নয়ত মেরে ফেলত। গভীর বনের ভেতর ছিল ডাকাতদের আস্তানা। দেশের দক্ষিণানঞ্চলের সুন্দরবনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বইটির প্রেক্ষাপট। বনের খেটে-খাওয়া মানুষদের সুখ-দুঃখ ও সংগ্রামের গল্প আর রোমাঞ্চকর সুন্দরবনের কাহিনিই হলো ‘কোকিলমণি’।
পুরো নাম মো. জাহিদুর রহমান। পিতার চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পড়াশুনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। চাকরি জীবনে বদলির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন পেশা ও সংষ্কৃতির মানুষ দেখার সুযোগ হয়েছে। ২০১৭ সালে সরকারি শিক্ষা বৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ডে যান। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধ বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে। লেখক হওয়ার স্বপ্ন ছিল না, কখনও কোনো লেখাও প্রকাশ হয়নি। সহধর্মিনী শাপলা পেন্সিলে লেখালিখি করত। স্ত্রীর লেখা পড়ে সমালোচনা লিখতে হতো। এভাবেই দুই লাইন লেখার অভ্যাস শুরু। আস্তে আস্তে লেখার নেশা পেয়ে বসল। পেশাগত কারণে সমাজের সকল পথ দেখার সুযোগ হয়েছে। সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার প্রচেষ্টা মনকে নাড়া দিয়েছিল, সেই প্রেরণা থেকেই উপন্যাস লেখায় মনোনিবেশ করেন।