‘আমাদের সংস্কৃতি ও সংগ্রাম’-গ্রন্থটির উপজীব্য এদেশের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার ও বিরোধী রাজনৈতিক ঘটনাপঞ্জীর খণ্ড ইতিহাস। লেখক তাঁর লেখায় তেভাগা আন্দোলনের অগ্নিদিনের কথা থেকে শুরু করে আজকের নরঘাতক জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে ক্ষুরধার শব্দাবলী উচ্চারণ করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতারের ছিল এক অনন্য ভূমিকা’ সেই বেতার সংগঠনের অনেক অজানা কথা প্রকাশ করেছেন এ গ্রন্থে। আমাদের প্রিয় গায়ক আলতাফ মাহমুদকে পাকিস্তানী হার্মাদ বাহিনী কেমন করে ধরে নিয়ে গিয়ে অকথ্য নির্যাতনেও একটি কথা বের করতে পারেনি কিন্তু জান কবচ করেছে-তার বিবরণ বিদ্রোহী বাংলা অক্ষরে সাজিয়েছেন। ১৯৫০-এ রাজশাহী সেন্ট্রাল জেলের খাপড়া ওয়ার্ডের পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড উদঘাটন করেছেন। নিগৃহীত লোকজ সংস্কৃতির করার মহল বাহন ‘যাত্রা’কে অশালীন বলে কলুষিত করার মহল বিশেষের চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার ডাক দিয়েছেন তিনি। লোকনৃত্যের বিপুল সম্ভাবনায় আমরা সমৃদ্ধ, তবুও কেন গড়ে ওঠেনি আমাদের নিজস্ব নৃত্যধারা-তার কারণ সন্ধান করে পথ নির্দেশ করেছেন। এদেশে গণসঙ্গীত চর্চা, মুক্তিযুদ্ধের গান, ভাষা আন্দোলনের গান, আবৃত্তি চর্চা, কণ্ঠকলা চর্চা বিষয়ের মূল্যবান তথ্যবহুল রচনাসমৃদ্ধ গ্রন্থটি এক অমূল্য সংযোজন।
কামাল লােহানী একজন প্রবীণ সাংবাদিক এবং এদেশের গণসংস্কৃতি আন্দোলনের অন্যতম পুরােধা ব্যক্তিত্ব। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বার্তা বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। মুক্ত স্বদেশে বাংলাদেশ বেতার সংগঠনের দায়িত্ব পড়েছিল তাঁরই কাঁধে। কিন্তু টিকতে পারেননি বেশিদিন। একবছর পরে ফিরতে হয়েছিল তাঁর পূর্বের পেশা সাংবাদিকতায়। সহ-সম্পাদক থেকে সম্পাদক হয়েছিলেন সুদীর্ঘকালের এ পেশায়। আবার সাংবাদিকতার স্বাধীনতা, সাংবাদিক অধিকার ও পেশাগত মর্যাদা আদায়ের লড়াইয়ে পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন ও স্বাধীনতাত্তোর কালে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব দিয়েছেন। কামাল লােহানী সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ, ফ্যাসিবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদ বিরােধী সংগ্রামে রাজপথের সৈনিক ছিলেন এবং এখনও আছেন। স্ত্রী দীপ্তি লােহানী (প্রয়াত) ছিলেন গেরিলা যােদ্ধাদের সহযােগী ।