"ট্রাইটন একটি গ্রহের নাম"বইটির প্রথমের কিছু অংশ: অশুভ গ্রহ সবাই গােল হয়ে ঘিরে আছে বড় মনিটরটি, একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে গ্রহটির দিকে। অত্যন্ত নিখুঁত বিশ্লেষণ করার উপযােগী মনিটর, নব্বই হাজার কিলাে মিটার দূরের আশ্চর্য গ্রহটিকে স্পষ্ট ফুটিয়ে তুলেছে। কিম জিবান, দলের ইঞ্জিনিয়ার, মনিটরের বিভিন্ন নবগুলি টিপে টিপে গ্রহটির ছবিটিকে আরাে স্পষ্ট করার চেষ্টা করছিল। মনিটরে গ্রহটির আশ্চর্য রঙগুলির বেশিরভাগই কৃত্রিম, কিম জিবানের দেয়া, খানিকটা দেখতে সুবিধা হওয়ার জন্যে এবং খানিকটা ভালাে দেখানাের জন্যে। সে ব্যক্তিগত জীবনে শিল্পী, অন্তত নিজে তাই বিশ্বাস করে, তাই কোনাে কাজ না থাকলে মনিটরের একঘেয়ে ছবিগুলিতে রঙ দিয়ে একটু বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করে। মহাকাশযানের নিয়মকানুনের ফাইল খুঁজে দেখলে হয়ত দেখা যাবে কাজটা যষ্ঠ মাত্রার বেআইনী কাজ, কিন্তু সেটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না, সবাই একসাথে থাকলে শব্দ করে হাঁচি দেয়াও নাকি ষষ্ঠ মাত্রার বেআইনী কাজ। কিম জিবান আজ খুব সুবিধে করতে পারছে না, গ্রহটিতে এমন একটা কিছু আছে যে যতই রঙ দেয়ার চেষ্টা করুক কিছুতেই সেটাকে দেখতে ভালাে লাগানাে যাচ্ছে না। খোঁচা খোঁচা দাড়ি ঘষতে ঘষতে কিম জিবান পুরাে গ্রহটিতে এক পোচ নীল রঙ বুলিয়ে দেয়, নীল রঙে যে কোনাে গ্রহকে ভালাে। দেখায় কিন্তু এবারে সেটা দিয়েও কোনাে লাভ হল না। বড় বড় গােলাকার গর্ত, যেগুলি নাকি খুব ধীরে ধীরে আকার পরিবর্তন করছে। গ্রহটিকে একটি কুৎসিত সরীসৃপের রূপ দিয়েছে, নীল রঙের সরীসৃপ এমন কিছু সুদর্শন বস্তু নয়। লু মহাকাশযান সিয়ানের দলপতি। দলপতির দায়িত্ব অন্যদের থেকে বেশি কথাটা পুরােপুরি সত্যি নয়। যখনি কোনাে সিদ্ধান্ত নিতে হয় সিসিয়ানের মূল কম্পিউটার সিডিসি তাকে সাহায্য করে। সিডিসি চতুর্থ মাত্রার কম্পিউটার, পৃথিবীতে চতুর্থ মাত্রার কম্পিউটারের সংখ্যা হাতে গােনা যায়। তার স্মৃতিভান্ডারে শুধু যে অপরিমেয় তথ্য রয়েছে তাই নয়, প্রয়ােজনে যে কোনাে মেমােরি ব্যাংকে যােগাযােগ করে প্রয়ােজনীয় জিনিস জানার অধিকার এবং ক্ষমতা দুইই তার আছে। সিডিসি ছাড়াও মহাকাশযানে অন্যান্য বিজ্ঞানীরা রয়েছে, এটি একটি অনুসন্ধানী মহাকাশযান। এখানে সবাই কোনাে না কোনাে ধরনের বিজ্ঞানী। লুকে যখন সিদ্ধান্ত নিতে হয় সে অন্য বিজ্ঞানীদের সাথে আলােচনা করে, যেটা সবাই ভালাে মনে করে সেই সিদ্ধান্তই নেয়া হয়। তবে তিন মাত্রা বা তার থেকে বেশি
বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী পাঠকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি মূলত এ দেশের একজন বিখ্যাত লেখক, পদার্থবিদ এবং শিক্ষাবিদ। কিশোর সাহিত্য, শিশুতোষ গ্রন্থ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, গণিত বিষয়ক বই এর জন্য খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবা ফয়জুর রহমানের চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলাতেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডি ডিগ্রী অজর্নের উদ্দেশ্যে স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিএইচডি সম্পন্ন করে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ ল্যাবেও গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সবসময়ই এ দেশের কিশোর-কিশোরীদের কাছে বিশেষ আবেদন নিয়ে হাজির হয়েছে। কিশোর সাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ক অজস্র গ্রন্থ দিয়ে তিনি আলোকিত করে তুলেছেন এদেশের অগণিত কিশোর-কিশোরীর মনোজগত। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমূহ, যেমন- দীপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ, আমি তপু, শান্তা পরিবার, দস্যি ক’জন ইত্যাদি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। তার বেশ কিছু গল্প পরবর্তীতে নাটক ও চলচ্চিত্র হিসেবে টিভি পর্দায় স্থান করে নিয়েছে। তিনি একজন বিশিষ্ট কলামিস্টও। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডও তাঁর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমগ্র সকল বইপড়ুয়াকেই আকৃষ্ট করে। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বহুবার পুরষ্কৃত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (২০০৪) এবং শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (২০০৫) সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক (২০০২), শেলটেক সাহিত্য পদক (২০০৩), ইউরো শিশুসাহিত্য পদকসহ (২০০৪) অগণিত পুরষ্কার অর্জন করেছেন গুণী এই সাহিত্যিক।