‘বিজ্ঞানের একশ মজার খেলা' ভূমিকাঃ আমি যখন তোমাদের মত ছোট ছিলাম তখন আমার খুব বিজ্ঞানের পরীক্ষা করার সখ ছিল। লাইব্রেরী থেকে মোটা মোটা বই এনে দিন রাত লেগে থাকতাম। দুদিন পরে পরে ঘরের কোনায় টেবিলের নীচে ল্যবরেটরী দাড়া হত, ভয়ংকর সব এক্সপেরিমেন্ট হত সেখানে। অনেক এক্সপেরিমেন্ট আবার করা যেতো না কারণ বেশীরভাগ বই হত বিদেশী আর সেখানে এমন সব জিনিষের কথা লেখা থাকত যেগুলি আমার মত একজ ছোট ছেলের পক্ষে জোগাড় করা ছিল অসম্ভব। একটা নোট বইয়ে আমি সবগুলি টুকে রাখতাম যে বড় হয়ে সেসবগুলি করব। মনে মনে একটু ভয় ছিল যে বড় হওয়ার পর বুঝি গম্ভীর হয়ে শুধু বড় বড় জিনিষপত্র করতে হবে, এই সব ছোট খাট ছেলেমানুষী এক্সপেরিমেন্ট করার আর সব বা সময় থাকবে না। তারপর কতদিন কেটে গেছে, সেই নোটবুক কোথায় হারিয়ে গেছে, কিন্তু সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার হল যে বড় হয়েও আমার সেই সখ কমে নি, সময়েরও অভাব হয় না, এখনো আমি ঘন্টার পর ঘন্টা এসব ব্যাপারে কাটিয়ে দিই! এই সেদিন নিউ জাসীর বাচ্চাদের একটা স্কুল আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিল এরকম কিছু এক্সপেরিমেন্ট করে দেখাতে। এক্সপেরিমেন্ট গুলি দেখে স্কুলে সাত আট বছরের বাচ্চাদের সে কি আনন্দ না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না! একটি বাচ্চা আমাকে চিঠি লিখে জিজ্ঞেস করল, আমি কি কোন এক ছুটির দিনে এসে ভয়ংকর একটা বিস্ফোরণ ঘুটয়ে পুরো স্কুলটা উড়িয়ে দিতে পারব কি না, স্কুল তার একেবারে ভাল লাগে না! বাচ্চাদের এই আনন্দ দেখে আমার ছাড়া করাতে যেন তোমাদের মত বাচ্চারা সেগুলি আমার করতে পারে। বেছে বেছে একশটা পরীক্ষা এখানে দেয়া হয়েছে যেগুলি করতে বেশী কিছু লাগে না হাতের কাছে যা আছে তাই দিয়ে করা যায়। পরীক্ষাগুলিকে আলো, বাতাস, তাপ, শক্তি এরকম কিছু ভাগ করা হয়েছে, কিন্তু সেগুলি এমন কিছু চুলচেড়া ভাগ নয়। সবগুলি যে খাটি বিজ্ঞানের পরীক্ষা তাও সত্যি নয়, কিন্তু সেগুলি যে মজার তাতে কোন সন্দেহ নেই। কয়েকটা পরীক্ষা করার জন্যে পরিশিষ্টে কয়েকটা ছবি নবা নকসা এঁকে দেয়া হয়েছে। কেটে নেয়ার পরেও যেন বইয়ে একটু করে থেকে যায় সেজন্যে দুবার করে দেয়া হয়েছে। কয়েকটা এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য মোমবাতির আগুন দরকার, সেগুলিতে সাবধান। হাতে পায়ে একটু গরম ছ্যাকা লাগলে ক্ষতি নেই কেন্তু বাড়ী ঘর যেন জ্বালিয়ে দিও না যেন! সবগুলি এক্সপেরিমেন্ট আমি নানাভাবে করে দেখেছি, সেগুলি কাজ করে তাতে কোন সন্দেহ নেই, তোমাদের শুধু ধৈর্য্য করে চেষ্টা করতে হবে। ইচ্ছে করে এই বইয়ে স্থির বিদ্যুতের অনেক মজার মজার পরীক্ষা দেয়া হয় নি, আমাদের দেশের বাতাসে জলীয় বাষ্প এত বেশী যে স্থির বিদ্যুতের পরীক্ষা করার জন্যে সেটাকে দীর্ঘ সময় ধরে রাখা যায় না। চুম্বক বা বরফের মজার পরীক্ষাগুলিও সে কারণে বলতে গেলে দেয়াই হয় নি, সবার কাছে সেগুলি সহজ লভ্য নাও হতে পারে। পরীক্ষাগুলি কেন কাজ করে তার পিছনে বিজ্ঞানটুকু প্রায় সব জায়গাতেই বলে দেয়া আছে। এক দুই জায়গায় অবশ্যি তোমাদের উপরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, সেটা ইচ্ছে করেই এই বইয়ের এক্সপেরিমেন্টিগুলির কিছু কিছু কয়েক হাজার বছরের পুরানো। বেশীরভাগ নানা রকম বইপত্র থেকে নেয়া। কিছু কিছু বইপত্র থেকে নিয়ে আমি নিজের মত করে দাড়া করিয়ে নিয়েছি। কয়েকটা পরীক্ষা আমার নিজের। এগুলি চেষ্টা করে তোমাদের কারো কারো বিজ্ঞানে উৎসাহ হবে, বড় হয়ে তোমরা বিজ্ঞানী ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্তার হবে, আর কিছু না হলে অন্তত পক্ষে বিজ্ঞানীদের মত চিন্তা ভাবনা করবে সেটাই আমার একমাত্র ইচ্ছে-তার বেশী কিছু নয়।
বস্তুর ধর্ম ১৭. কাগুজে শক্তি ১৮. পয়সা ও ম্যাচকাঠি ১৯. কাগজের শাপলা ২০. গোপন লেখা
বল ও শক্তি ২১. নিউটনের সূত্র ২২. শক্তি পাচার ২৩. মাধ্যাকর্ষনের বিরুদ্ধে ২৪. কনুই ও আধুলি ২৫. বড় বল ছোট বল ২৬. ঝুলন্ত বই ২৭. সূতা ছেড়া ২৮. গ্লাশের উপরে গ্লাশ ২৯. লম্ফ বিভ্রান্তি
মাধ্যাকর্ষণ ৩০. বড় লাঠি ৩১. এক পায়ে দাড়ানো ৩২. ঝুলে থাকা-দাড়িয়ে থাকা ৩৩. আজগুবি লাটিম ৩৪. প্রজাপতি ৩৫. চাকু ও পেন্সিল ৩৬. গ্যালেলিওর পরীক্ষা ৩৭. বল পয়েন্ট কলম
সারাংশ ‘বিজ্ঞানের একশ মজার খেলা’ বইটি লেখেছেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর জন্ম ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫২। তিনি হলেন একজন বাংলাদেশী লেখক, পদার্থবিদ ও শিক্ষাবিদ।তাকে বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখা ও জনপ্রিয়করণের পথিকৃত হিসাবে গণ্য করা হয়।তিনি বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের একজন অধ্যাপক এবং তড়িৎ কৌশল বিভাগের প্রধান।বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড গড়ে তোলার পিছনে তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে। বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ তার বড় ভাই এবং রম্য ম্যাগাজিন উন্মাদের সম্পাদক ও কার্টুনিস্ট, সাহিত্যিক আহসান হাবীব তার ছোট ভাই। এই বইটিতে ১০০টি পরিক্ষা-নিরীক্ষার কথা লেখক লিখেছেন তার এই বইতে তার থেকে ২টি পরিক্ষা একটু ব্যাখ্যা করা হল যাতে বইটি সম্পকে একটি ধারণা পাওয়া যায়। দুর্বিনীত বেলুনঃ যাদের ফুসফুসে জোর আছে তারা খুব সহজেই বেলুন ফুলাতে পারে। একটা বেলুন একটি বোতলের ভিতর ঢুকিয়ে ফুলানোর চেষ্টা করলে দেখা যাবে একটি সময় যতই চেষ্টা করা হচ্ছেনা কেন বেলুনটি আর ফুলাতে পারছে না এবং সম্পূর্ণ বোতলের গায়ে বেলুনটি লাগানো যাচ্ছে না। বিচিত্র বেলুনঃ বেলুনের গায়ে পিন ফুটালে সেটা সশব্দে ফেটে যায়। একটি বেলুনের উপর যদি খানিকটা টেপ খুব ভালে করে লাগিয়ে নাওয়া হয়, তারপর সেখানে পিন দিয়ে ফুটো করলে বেলুনটা কিন্তু ফাটবে না। দেখা যাবে পিনের ফুটো দিয়ে আস্তে আস্তে বাতাসটা বের হয়ে বেলুনটা চুপসে যাবে ইত্যাদি আরো ৯৮টি খুব সহজ এবং সুন্দর পরিক্ষা দেওয়া আছে এই বইটিতে।