আড্ডায় বসা অন্যদের দৃষ্টি তখন বদলে যেতো। এতোক্ষণের খিস্তিখেউরি আর চোগলামি করা, আড্ডার পাশ দিয়ে যাওয়া মহল্লার মেয়েদের দেখে মন্তব্য ছোঁড়া একদল কিশোর বা যুবক তখন আড্ডার বাইরের কোনো একান্ত ভাবনায় ডুবে যাওয়ার অদৃশ্য তাড়নায় মগ্ন। প্রেমিকার অবহেলা, বাড়িতে বাবার গালিগালাজ বা অপমান, ক্লাসের ফেল লুকোনো লজ্জা, আর ধার বা বাকিতে খাওয়া সিগারেটের বোঝা এক মুহূর্তের জন্য ভুলে থাকার লোভ তখন আকরামের চারপাশে বসা আট-দশ জোড়া চোখের দৃষ্টিতে। সেই দৃষ্টিকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা আকরামের ছিলো না। ও পকেট থেকে কাগজ বের করে পড়া শুরু করতো। ‘অবুঝ ছিলো মন, তোমার কাছেই ছুটতো সারাক্ষণ ... এক মুঠো রোদ আঁকড়ে ধরে পৌঁছে দেয়ার অলীক বরে হৃদয় আমার কাঁদতো যে রাতদিন, তোমার অবহেলায় ছিলো এই প্রেমিকের দুঃখগুলো রোদটুকু এই শুকনো করে অপেক্ষাতে গেলোই মরে করলে না শোধ অবুঝ মনের উষ্ণ জমাট ঋণ’। আকরামের চারপাশে তখন পলক নামানো, স্থির, বা শূন্যে মেলা আট-দশ জোড়া তরুণ চোখ। জীবনের অনেক কিছুই সেসব চোখের অদেখা, অথচ অনেক অদেখার স্বপ্ন সেসব বন্ধ চোখের গোপন কুঠুরিতে। সেই আসরে, সেই ব্যর্থ, নিরর্থক অথচ স্বপ্নবাজ মনের মেলায় আকরাম ছিলো কবি আকরাম। পৃথিবীর আর কোনো আসর বা আয়োজন কবি আকরামকে এভাবে ভালোবাসেনি।
সাহিত্য, কাব্য আর সঙ্গীতকে নিয়ে স্বপ্নময় আপন ভুবনে কেতন শেখ-এর সময় কাটে। নিয়মিত লিখছেন জাগৃতি প্রকাশনী ও বর্ষা দুপুরের জন্য। পরিজামীরা, অধরা অনুরাগ, অভিসরণ, রাধিকা, কাজল, নীল গাড়ি ও সাদা স্বপ্ন ও এক-দুই-আড়াই তার লেখা আলোচিত উপন্যাস। এছাড়াও লিখেছেন অন্তঃস্রোত (গল্পগ্রন্হ), নিরাকার (গল্পগ্রন্হ), চতুষ্পথ (কাব্যগ্রন্হ), চতুষ্টয় (কাব্যগ্রন্হ) ও চতুষ্কোণ (কাব্যগ্রন্হ)। সম্পাদনা করেছেন বারো ভৌতিক (গল্প সংকলন), শুভেচ্ছা, স্বাগতম! (শিশুতোষ গল্প), দীপান্জলী (কাব্য সংকলন), দীপান্জলি ২ (কাব্য সংকলন) ও ঈশানের ভাবনা (শিশুতোষ গল্প)। জন্ম ঢাকায়। পেশায় অর্থনীতিবিদ। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ সাউদাম্পটন থেকে অর্থনীতিতে পি এইচ ডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টমিন্স্টারে অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। লেখালেখির মতো সঙ্গীতও তাঁর অন্যতম প্রিয় শখ। তাই মাঝে মাঝে অবসরে তিনি ব্যক্তিগত রেকর্ডিং স্টুডিও এপসিলনে নীল বাতি জ্বালিয়ে সুর সৃষ্টি করেন। ব্যক্তিজীবনে আড্ডাপ্রিয়। বাকি সময় নষ্ট করেন ফেসবুকে আর সিনেমা দেখে।