ভ্রমণবিলাসী চব্বিশ বছরের টগবগে যুবক সাকিব, ছেলেবেলায় টিভিতে দেখা "সোর্ড অব টিপু সুলতান" দেখে ঈদের ছুটিতে তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন টিপু সুলতানের স্মৃতি বিজড়িত ভারতের মাইসোর চলে আসে। সেখানে এক প্রতিকূল আবহাওয়ায় পড়ে স্থানীয় জনৈক বৃদ্ধের ছাপড়ায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। গল্পের বিষয়বস্তু এটা নয়। সেই বৃদ্ধের ছাপড়ায় রাত্রীযাপনের সময় তার মুখ থেকে সে এক অদ্ভুত গল্প শোনে। গল্পটি প্রায় আড়াইহাজার বছর আগের। পূর্বকথা ও শেষের কথা ছাড়া ১৬০ পাতার এই বইয়ের আর কোথাও সাকিবের নাম আসেনি। তবে তার গল্পটিই উঠে এসেছে বইতে। তো, কী আছে সেই 'অদ্ভুত' গল্পে? ইতিহাস ও মিথোলজির সাথে নিজের কল্পনাশক্তির অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটিয়ে রোকেয়া আশা যে গল্পটি লিখেছে, সেটিতে ক্ষমতার লোভ, বিদ্রোহ, যুদ্ধ ও হত্যার মতো কিছু টানটান উত্তেজনাকর ঘটনা যেমন আছে, সাথে আছে রোমান্টিক একটি আখ্যানও। গল্পে বিখ্যাত মগধ সাম্রাজ্যের সম্রাট অশোক, তার গোপন জ্ঞানী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গড়া 'অজ্ঞাত নয়', আচার্য চাণক্য, অসম্ভব সুন্দর চোখের অধিকারী অশোকের পুত্র কুনাল যেমন এসেছে, দেবী চামুণ্ডেশরী, লোহার দেবতা খুজ, অসুররাজ মহিষাসুর চরিত্রসহ অকালবোধনের মতো কিছু বিষয়ও এসেছে। ইতিহাস ও মিথোলজি থেকে ধারণা নিয়ে রোকেয়া আশা কিছু কাল্পনিক চরিত্র সৃষ্টি করেছে, যেমন মহিষাসুর, চামুণ্ডেশরী, অন্য এক কুনাল এবং অজ্ঞাত নয়ের একজন সদস্য - যে এই গল্পের প্রধান চরিত্র আচার্য ধীমান। মগধের রাজধানী পাটালিপুত্র থেকে সম্রাট অশোকের সম্রাজ্যের একটি সম্পদশালী অঙ্গরাজ্য মহাবালাচলে তিনি রাজ্যপাল হিসেবে মহিষাসুরকে পাঠালে তিনি সেখানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন এবং নিজে অসুর বলে, অসুরদের অধিক সুবিধা দেয়ার লোভ দেখিয়ে তাদের ব্যবহার করেন আর স্বল্পসংখ্যক যে গুটি কয়েক ব্রাহ্মন পরিবার ছিল, তাদের হত্যা শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি ক্ষমতার লোভে সম্রাট অশোকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে যুদ্ধে লিপ্ত হন। আচার্য ধীমান, চামুণ্ডেশরী ও ছোট কুনাল এই যুদ্ধ বন্ধের জন্য যাবতীয় চেষ্টা করলেও মহিষাসুর প্রায় অদম্য হয়ে ওঠেন। গল্পের শেষে পাঠকের জন্য রয়েছে বেশ কিছু চমক, যা লিখে কোনো স্পয়লার দিতে চাই না। ... এমন কঠিন একটা বিষয় নিয়ে লিখতে গিয়ে রোকেয়া আশার যে অনেক রিসার্চ করতে হয়েছে, অন্যান্য ধর্মের বন্ধুদের সাথে আলোচনা করতে হয়েছে, ইতিহাস ও মিথোলজি নিয়ে প্রচুর পড়তে হয়েছে, তাতে কোনোই সন্দেহ নেই। কিন্তু এত চমৎকারভাবে সে প্লট ডেভেলপমেন্ট ও ইতিহাস ও মিথোলজির সাথে তার লেখা চরিত্রগুলোর মেলবন্ধন ঘটিয়েছে যে, পাঠক একবারের জন্যও কোনো অসংগতি খুঁজে পাবেন না। বরঞ্চ হারিয়ে যাবেন আজ থেকে প্রায় তেইশশো বছর আগের ঘটনাবলীর সাথে।