আইন বিশেষজ্ঞ ভাষাসৈনিক আ.ন.ম. গাজীউল হক ইংরেজী ১৯২৯ সালের ১৩ই ফেব্রæয়ারি, বাংলা ১৩৩৫ সালের ১’লা ফাল্গুন বৃহত্তর নোয়াখালীর ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার নিচিন্তা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বুদ্ধি বয়স থেকেই তাঁর পরিবারের কাছ থেকে তিনি তৎকালীন খেলাফত ও কংগ্রেসের রাজনৈতিক তৎপরতা ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আলোচনা ও গল্প শুনেছেন। ফলশ্রুতিতে তাঁর মনমানসিকতায় স্বাধিকার, মানব কল্যাণ ও জনহিতকর কাজের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। ছাগলনাইয়া হাইস্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে জীবনে প্রথম রাজনৈতিক মিছিলে অংশ নেন। ১৯৪১ সালে ২৩শে মার্চ পাকিস্তান দিবস উদ্যাপন করার জন্য ছাগলনাইয়ায় মিছিল বের হলে থানা কার্যালয়ে উড়ানো বৃটিশ পতাকা ‘ইউনিয়ন জ্যাক’ নামিয়ে সেখানে পাকিস্তানী তিনকোনা পতাকা উড়িয়ে দিতে বিন্দুমাত্র ভয় পাননি কিশোর গাজীউল হক। এজন্য জীবনে প্রথম তাঁকে গ্রেফতার হয়ে ৪ ঘণ্টা হাজতবাস করতে হয়েছিল। দেশবরেণ্য ধর্মীয়গুরু মাওলানা সিরাজুল হক ছিলেন গাজীউল হকের বাবা। মা বেগম নূরজাহান ছিলেন একজন বিদূষী মহিলা এবং সঙ্গীতানুরাগী। তাঁরা ছেলে গাজীউল হকের এই কর্মকাণ্ড দিশেহারা হয়ে পড়েন। স্কুল শিক্ষকের পরামর্শে নিরাপত্তার জন্য তাঁকে নিয়ে চলে আসেন বগুড়ায়। পরবর্তী সময়ে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁকে রাজনৈতিক কারণে বার-বার কারাবরণ করতে হয়েছে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ১৯৫২ সালেরবানে ফেব্রুয়ারি এই আপোষহীণ সূর্যসন্তান ঐতিহাসিক আমতলার জনসভায় সভাপতিত্ব করে ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে ভাষাসৈনিক গাজীউল হক বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেন এবং মুক্তিযুদ্ধকালে বগুড়ার সর্বদলীয় হাইকমান্ড নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আগস্ট মাসের শেষে আ.ন.ম গাজীউল হক কতিপয় বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা কর্তৃক গ্রেফতার হন। ঘাতক-দালাল নির্মূল এবং ঘাতকের ফাঁসির দাবিতে জনতা যখন রাজপথে নেমেছিলেন, ১৯৯২ সালে গঠিত গণআদালতের বিচারকের আসন থেকে তিনি ফাঁসির রায় ঘোষণা করেন। জনাব গাজীউল হক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, কোষাধ্যক্ষ এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মÐলীর সদস্য ছিলেন। তিনি বাংলা একাডেমির আইন উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা মন্ত্রির সদস্য ছিলেন।