জেলা শহর হিসেবে কুমিল্লা শহর বড়ো নয়, কিন্তু এই ছোট্ট শহরের সংস্কৃতি-চর্চার অনুকূল পরিবেশ ও ঐতিহাসিক একটা ধারাবাহিকতা রয়েছে। সেকালের ত্রিপুরা রাজ্যের অন্ত র্ভুক্ত হওয়ার সুবাদে মহারাজা বীরচন্দ্র মাণিক্যের (১৮৩৯-১৮৯৬) আর্থিক সহায়তায় ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত গণপাঠাগার মিলনায়তন তথা আজকের ‘টাউন হল’ কে ঘিরে প্র গতিশীল সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিকাশ লাভ করে। শচীনদেব বর্মণের (১৯০৬-১৯৭৫) সংগীত চর্চা, কাজী নজরুল ইসলামের (১৮৯৯-১৯৭৬) আগমন, নিঃসন্দেহে এই সাংস্কৃতিক ধারাকে উজ্জীবিত ও সমৃদ্ধ করেছে। ত্রিপুরা রাজপরিবারের স্মৃতি বহন করা ‘টাউন হল’টি কুমিল্লাবাসীর গৌরব ও প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রতীক। এছাড়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল ইন্সটিটিউট, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, জিলা স্কুল, রামমালা গ্রন্থাগার, শালবন বিহার, নবপ্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে নানা সংগঠনের সমবায়ে সংস্কৃতি-চর্চার নতুন নতুন ক্ষেত্র প্রসারিত হচ্ছে। নূর মোহাম্মদ রাজু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছাত্র এবং বর্তমানে বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি কুমিল্লা শহর কেন্দ্রিক নাট্য চর্চা, সংগীত চর্চা, নৃত্য চর্চা, আবৃত্তি চর্চার সংগঠনগুলোর বিচিত্র সাংস্কৃতিক তৎপরতার একটা সমীক্ষা তুলে ধরেছেন বর্তমান গ্রন্থে। নূর মোহাম্মদ রাজু তাঁর বেড়ে ওঠা শহরের বিচিত্র সাংস্কৃতিক প্রয়াসকে নিজের দেখা অভিজ্ঞতা থেকে বর্ণনা করেছেন। ‘কালচার মানে উন্ন ততর জীবন সম্বন্ধে চেতনা-সৌন্দর্য, আনন্দ ও প্রেম সম্বন্ধে অবিহিত।’ মোতাহের হোসেন চৌধুরীর এই উক্তির আলোকে বলা যায় কুমিল্লার সাংস্কৃতিক অঙ্গন : একটি সমীক্ষা বইটির আলাদা একটা তাৎপর্য ও গুরুত্ব রয়েছে। কুমিল্লা শহরের সাংস্কৃতিক চর্চার কোনো তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ নয়, তবে বিস্তৃত বিবরণ পাঠকদের জানার আনন্দ দেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।