বাস্তবের সাথে কল্পনা মিলিয়ে আধাে ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং একই সাথে তা পাঠকের কাছে বিশ্বাসযােগ্যভাবে তুলে ধরা চাট্টিখানি কথা নয়। অতিপ্রাকৃত গল্পগুলি পড়তে গিয়ে তাে মনে হয়েছে এসবই লেখকের জীবনে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনা, এমন-ই প্রাণবন্ত লেখনী। এতে প্রয়ােজন লেখকের অনন্য মুন্সিয়ানা, যা রয়েছে লেখক রাজ কামাল আহমেদ-এর। তার লেখার সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য দিকটি হলাে সামাজিক দায়বদ্ধতা। যা-ই লিখেন, যে ফরম্যাটেই লিখেন, এমনকি তা যদি রূপকথার গল্পও হয়, সেখানেও থাকে সমাজ ও জাতির প্রতি একটি বিশেষ বার্তা। যেটির কথা শত বছর আগেই নাদেজদা ক্রুপস্কায়া বলতেন তার সকল লেখায়। শুধু তাই-ই নয়, তিনি এই বার্তাটি অনেকটা স্লোগানে রূপান্তরিত করে ফেলেছিলেন, যার প্রতিচ্ছবি আমরা দেখতে পাই রাজ কামাল আহমেদ-এর গল্পগুলিতে। কিছু গল্প তাে রীতিমতাে দর্পণে আঁকা সমাজই মনে হয়েছে আমার কাছে। সামাজিক মাধ্যমের অপব্যবহারের সতর্কতামূলক বার্তাও তিনি ক্যারিশম্যাটিক পন্থায় উপস্থাপন করেছেন গল্পের মাধ্যমে। রম্যগল্পগুলি নির্মল এবং দমফাটানাে হাস্যরসের হলেও সেগুলির মধ্য দিয়েও তিনি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছে দিতে সচেষ্ট। রাজ কামাল আহমেদ-এর এই বৈচিত্র্যময় বহুমাত্রিকতা তাঁকে অন্য লেখকদের থেকে অনন্য করে তুলেছে। “রাত্রির যাত্রী” তার প্রথম প্রকাশনা।
রাজ কামাল আহমেদ ডাকনাম মুন্না। জন্ম ২৮ ডিসেম্বর, সিরাজগঞ্জ। লেখালেখির অভ্যাস শৈশবকাল থেকেই। প্রাঞ্জল ও সাবলীল শব্দচয়নে তাঁর লেখা গল্পের গতিময় জমাট কাহিনী পাঠককে সহজেই আকৃষ্ট করে। তাঁর প্রতিটি লেখায় তিনি নির্মম অথচ বাস্তব বার্তা (Message) পাঠককে পৌঁছে দেবার চেষ্টা করেন এবং এটি তাঁর লেখার একটি স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখি করে তিনি ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। প্রিয় শখ বই পড়া, বাগান করা। তিন গোয়েন্দা, শার্লক হোমস, নন্টেফন্টে ছিল তাঁর কৈশোরের “ ফ্যান্টাসি। হুমায়ূন আহমেদ, সত্যজিৎ রায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় প্রমুখের বই পড়তে তাঁর অসম্ভব ভালো লাগে। ঝুম বৃষ্টির ঝিমঝিম শব্দ শোনা আর অবারিত সবুজ দেখা তাঁর অবর্ণনীয় পছন্দের মুহূর্ত। তাঁর আজন্ম লালিত স্বপ্ন হচ্ছে স্বপ্নের চেয়েও বড় কিছু করা। মানবসেবার মহান ব্রত নিয়ে রাজ কামাল আহমেদ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ঢাকা থেকে অর্থোপেডিক্স সার্জারিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। “রাত্রির যাত্রী” তাঁর প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ।