ডন এম. গ্রিন -নেপোলিয়ান হিল ফাউন্ডেশনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এটা কি কখনও আপনাকে হতবাক করেছে? কেন কিছু মানুষের পে ক্ষ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয় আর কিছু মানুষের পক্ষে তা হয় না। নেপোলিয়ান হিলের কিশোর বয়সের প্রশ্ন ছিল এটাই এবং তিনি সারা জীবন কাটিয়েছেন ঐ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে। হিল খুঁজেছেন কেন কিছু মানুষ সফল এবং অগণিত মানুষ সফল হতে পারে না। আর যেমনটা পৃথিবীর অন্য কোনো মানুষ কখনও করেনি। অলিভার নেপোলিয়ান হিল ১৯৮৩ সালে ভার্জিনিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমের দুর্গম পাহাড় সমৃদ্ধ এলাকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। হিল জীবনে সাফল্য অর্জন করবেন, জীবনের শুরুর দিকে এর কোনো লক্ষণই ছিল না। একটা কেবিনে জন্মগ্রহণ, তিনি একদিন বলেছিলেন, আমার পূর্ব তিন পুরুষ এই পাহাড়ি অঞ্চলের বাইরের জগৎ সর্ম্পকে অজানা থেকেই দারিদ্রের সাথে কঠোর সংগ্রামের মধ্যে জন্মগ্রহণ আর মৃত্যুবরণ করে আসছে। যখন কোনো পশ্চিমা শহরের সাথে তুলনা করা হয় তখন মনে হয় াদের জীবন ছিল খুবই সংকীর্ণ। যেখানে উচ্চাকাক্সক্ষার দামে জীবনের প্রত্যাশা খুব ছোট ছিল। অপর্য াপ্ত পুষ্টির অভাবে বহু ভার্জিনিয়াবাসী নানা রকম অসুখে ভুগতো। দশ বছর বয়সে যখন বড় কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি অর্জনের জন্য সামান্য প্রত্যাশা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক সে সময় মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে তার মা মারা যান। পরের বছর বাবা বিয়ে করলেন, আর সেটাই ছিল কিশোর হিলের জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। নেপোলিয়ানের সৎমা মার্থা র্যামেই ব্রানার ছিলেন একজন শিক্ষিত মহিলা, উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিধবা স্ত্রী এবং ডাক্তারের মেয়ে। নতুন মা হিলের মধ্যে নতুন সম্ভাবনা দেখতে পেলেন, যেটা অন্য কেউ কখনও খেয়াল করেনি। তিনি এক টাইপ রাইটারের হয়ে বন্দুকের ব্যবসা করতে হিলকে রাজি করান এবং কিভাবে বন্দুক চালাতে হয় তার প্রশিক্ষণও দেন। পনেরো বছর বয়সে টাইপ রাইটার তাকে দিয়ে খবর টাইপিং করাতো আর এটা তার জন্য একটা মূল্যবান সক্ষমতা হিসেবে ধরা দেয়। রাজ্যেগুলোর প্র ধান কয়েকটা শহর ছাড়া বাকি সব জায়গার স্কুলে র অবস্থা ছিল জরাজীর্ণ। পাহাড়ি অঞ্চলের প্রাথমিক স্কুলগুলো বছরে মাত্র চার মাস খোলা থাকতো আর সেখানে উপস্থিতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের কোনো জবাবদিহি করতে হতো না। উচ্চ বিদ্যালয়ও ছিল খুবই কম। সারাটা রাজ্যে মাত্র একশোটার মতো উচ্চ বিদ্যালয় ছিল যেগুলোর বেশির ভাগেই আবার দুই-তিন বছরের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। হিলের জন্মের বিশ বছর পরেও পুরো ভার্জিনিয়াতে মাত্র দশটা চার-বছরের শিক্ষা ব্যবস্থাওয়ালা উচ্চ বিদ্যালয় ছিল। ঐ পরিস্থিতি থেকে নিজেকে সরিয়ে এনে সাফল্য অর্জন করা এবং পৃথিবী জুড়ে কয়েক লক্ষ মানুষকে প্র ভাবিত করা, অনুপ্রাণিত করা, সত্যিই প্র শংসার দাবি রাখে। হিল প্রায়ই শৈশবকালের স্মৃতিগুলো তার লেখা আর্টিক্যাল, বই অথবা বক্তৃতায় স্মরণ করে ন। তার স্মৃতিচারণগুলো বেশিরভাগই অত্যন্ত দুখঃজনক ভার্জিনিয়ান ওয়াইজ থেকে দুই বছরের উচ্চ বিদ্যালয় শেষ করে হিল একজন এক্সিকিউটিভ হিসেবে পরিচিতি পেলেন। এরপর তাজওয়ালের কাছে একটা বিজনেস স্কুলে দুই বছরের কোর্স নিয়ে সেক্রেটারি চাকরির জন্য ভর্তি হলেন। এটা তাকে পরবর্তীতে ব্যবসায়িক দুনিয়ায় যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। দক্ষিণ-পশ্চিম ভার্জিনিয়া পাহাড়ে সর্বোচ্চ সফল একজন ব্যক্তির সাথে কাজ করার জন্য হিল আবেদন করলেন। এ সম্পর্কে হিল জানান, আবেদনের প্রেক্ষিতে চাকরিদাতা তাকে একজন শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজ করার অনুমতি দেন। রুফুস আয়াস একজন ধনী এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক সফল জেনারেল। তিনি ছিলেন নেপোলিয়ানের নতুন চাকরিদাতা। কেন নেপোলিয়ন হিল দারিদ্র তা এবং অজ্ঞতায় জর্জরিত থেকেও জেনারেল আয়ার্সে র সাথে কাজ করতে চেয়েছিলেন, সেটা বোঝা খুব সহজ। রোড টু সাকসেস ১১ ১২ রোড টু সাকসেস বিজনেস কলেজে কোর্স শেষ করার পর নেপোলিয়ান আয়ার্সকে লিখেছিলেন, “আমি মাত্র বিজনেস স্কুল শেষ করেছি। সে হিসেবে আপনার সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করার মতো যথেষ্ট যোগ্যতা আমার হয়েছে। এই পদটা নিয়ে আমি কিছুটা উদ্বিগ্নও বটে...কারণ এক্ষেত্রে আমার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। আমি জানি, আপনার সাথে কাজ করাটা আপনার চেয়েও আমার জন্য বেশি জরুরি হিসেবে বিবেচিত হবে। আর এ জন্যই আমার যোগ্যতাসম্পন্ন বেতনে আপনার সাথে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছি...। আপনার বিবেচনায় ন্যায্য হলে যেকোনো চার্জ আপনি করতে পারেন, যেটা তিন মাস শেষে আমার বেতন হিসেবে গণ্য হবে। যে টাকাটা আমাকে বেতন হিসেবে দেয়া হবে সেটা আমার আয় করার শুরু থেকেই কর্তন যাবে।” কাজে আসতেন সবার আগে আর ফিরতেন সবার পরেÑ এমন তরুণ যুবকব নেপোলিয়ান হিলকে আয়ার্স চাকরিতে নিলেন। হিলকে “যতটা বেতন দেয়া হতো তার চেয়ে বেশি সেবা দিতেন।” আর এই অতিরিক্ত পথ যাওয়াটাই হলো হিলের সফল হওয়ার প্র ধান চাবিকাঠি। সেই সময় আয়ার্সের এমন অবস্থা ছিল যেখানে হিল ভালোভাবেই তার সেবা করতে পারে, তখন তিনি এমনভাবে কাজ শুরু করেন যেটা তাদেরকে সফলতার দিকে নিয়ে যায়। তরুণ আয়ার্স মিত্রবাহিনীর হয়ে গৃহযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যুদ্ধের পরে এক স্টোরে কাজ করার সময় তিনি আইন নিয়ে পড়াশুনা করেন। এর ফলশ্রুতিতে ভার্জিনিয়া রাজ্যের এটর্নি জেনারেল হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন এবং একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি ব্যাংকগুলোকে সাহায্য করতেন এবং কয়লা খনি পরিচালনা করা ছাড়াও অন্যান্য ব্যবসার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আয়ার্সের জীবনকাহিনী থেকেই হিল আইন বিষয়ে পড়ে এটর্নি হওয়ার ধারণাটা পান। হিল তার ভাই ভাইভিয়ানকে জর্জ টাউন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে রাজি করান যেখানে থেকে তিনি লেখালেখি করে তাদের দুজনেরই ভরণপোষণ চালিয়ে নিতে পারেন। যে তথ্য হিল জোগাড় করেন সেটা তার জীবনে লেখালেখি এবং তার ব্যক্তিগত অর্জন সম্পর্কে বক্তৃতা দেয়ার দিকে পরিচালনা করে। হিলের ব্যক্তিগত আবিষ্কারগুলো ১৯২৮ সালে আই খ-ে ল’ অব সাকসেস এবং নিজেকে সাহায্য করা নিয়ে যে সব বই প্রকাশিত সেগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ কপি বিক্রির রেকর্ড বই থিংক এন্ড গ্রো রিচ্-এ ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয়। আপনি এখন যে বইটি পড়তে যাচ্ছেন হিলের প্রকাশিত প্রথম বইয়ের আগের বইগুলোর মধ্যে এই বইটি আপনার সাফল্যের জন্য মহা মূল্যবান দিকনির্দেশনাবলি দেখাবে। ১৯০৮ সালে হিল কর্নে গীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তার প্রকাশিত প্রথম বইয়েরও বিশ বছর পূর্বে। হিল বব টেইলর’স ম্যাগাজিনে নিজের চাকরি স্থায়ী করে নিয়েছিলেন। ১৯০৮ সালে হিল নিউইয়র্কে এন্ড্রু কার্নেগীর চৌষট্টি রুমের একটা ম্যানশনে ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য আবেদনপত্র পাঠিয়েছিলেন। কার্নেগীকে আমেরিকায় খুবই কম শিক্ষিত অবস্থায় আসতে হয়েছিল। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে কার্নে গী কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কোটিপতি হয়েছিলেন। ইউ. এস. স্টিলের কর্ণধার হিসেবে হিল যখন কার্নেগীর সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন তখন তার বয়স চুয়াত্তর বছর। ১৯১৯ সালে মৃত্যুর সময় ইউ.এস স্টিল থেকে আয়ের ৩৫০ মিলিয়ন ডলার কার্নেগীকে রেখে চলে যেতে হয়েছিল। কার্নেগী তার অর্জনের নীতিগুলো নিয়ে হিলের সাথে কথা বলতেন। আড্ডা শেষ হওয়ার আগে কার্নেগী হিলকে তার ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতেন এবং মহান নেতাদের জীবনী পড়ার জন্য এবং এর মাধ্যমে তার আবিষ্কারগুলোকে একটা নীতির আলোকে সংকলন করতে যাতে করে মানুষ নিজেরাই নিজেদেরকে সাহায্য করতে পার এবং নিজেদের স্বপ্ন সম্পর্কে জানতে পারে। কার্নেগী তখনকার সময়ের বিখ্যাত নেতাদের মধ্যে ডন ডি. রকফেলার, টমাস এডিসন, হেনরি ফোর্ড এবং জর্জ ইস্টম্যানের সম্পর্কে হিলকে ভূমিকাস্বরূপ কিছুটা ইঙ্গিত করে গেছেন। কেন হিলের কাজগুলো পৃথিবীতে এতটা জনপ্রিয় এবং আত্মনির্ভরশীলতার আন্দোলন বর্তমানেও কেন এতটা জনপ্রিয় যেমনটা পৃথিবীর ইতিহাসে আর কেউ পারেনি আপনি খুব তাড়াতাড়ি তা বুঝতে পারবেন। ডন এম. গ্রিন Ñনেপোলিয়ান হিল ফাউন্ডেশনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এটা কি কখনও আপনাকে হতবাক করেছে? কেন কিছু মানুষের পে ক্ষ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয় আর কিছু মানুষের পক্ষে তা হয় না। নেপোলিয়ান হিলের কিশোর বয়সের প্রশ্ন ছিল এটাই এবং তিনি সারা জীবন কাটিয়েছেন ঐ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে। হিল খুঁজেছেন কেন কিছু মানুষ সফল এবং অগণিত মানুষ সফল হতে পারে না। আর যেমনটা পৃথিবীর অন্য কোনো মানুষ কখনও করেনি। অলিভার নেপোলিয়ান হিল ১৯৮৩ সালে ভার্জিনিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমের দুর্গম পাহাড় সমৃদ্ধ এলাকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। হিল জীবনে সাফল্য অর্জন করবেন, জীবনের শুরুর দিকে এর কোনো লক্ষণই ছিল না। একটা কেবিনে জন্মগ্রহণ, তিনি একদিন বলেছিলেন, আমার পূর্ব তিন পুরুষ এই পাহাড়ি অঞ্চলের বাইরের জগৎ সর্ম্পকে অজানা থেকেই দারিদ্রের সাথে কঠোর সংগ্রামের মধ্যে জন্মগ্রহণ আর মৃত্যুবরণ করে আসছে। যখন কোনো পশ্চিমা শহরের সাথে তুলনা করা হয় তখন মনে হয় াদের জীবন ছিল খুবই সংকীর্ণ। যেখানে উচ্চাকাক্সক্ষার দামে জীবনের প্রত্যাশা খুব ছোট ছিল। অপর্য াপ্ত পুষ্টির অভাবে বহু ভার্জিনিয়াবাসী নানা রকম অসুখে ভুগতো। দশ বছর বয়সে যখন বড় কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি অর্জনের জন্য সামান্য প্রত্যাশা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক সে সময় মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে তার মা মারা যান। পরের বছর বাবা বিয়ে করলেন, আর সেটাই ছিল কিশোর হিলের জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। নেপোলিয়ানের সৎমা মার্থা র্যামেই ব্রানার ছিলেন একজন শিক্ষিত মহিলা, উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিধবা স্ত্রী এবং ডাক্তারের মেয়ে। নতুন মা হিলের মধ্যে নতুন সম্ভাবনা দেখতে পেলেন, যেটা অন্য কেউ কখনও খেয়াল করেনি। তিনি এক টাইপ রাইটারের হয়ে বন্দুকের ব্যবসা করতে হিলকে রাজি করান এবং কিভাবে বন্দুক চালাতে হয় তার প্রশিক্ষণও দেন। পনেরো বছর বয়সে টাইপ রাইটার তাকে দিয়ে খবর টাইপিং করাতো আর এটা তার জন্য একটা মূল্যবান সক্ষমতা হিসেবে ধরা দেয়। রাজ্যেগুলোর প্র ধান কয়েকটা শহর ছাড়া বাকি সব জায়গার স্কুলে র অবস্থা ছিল জরাজীর্ণ। পাহাড়ি অঞ্চলের প্রাথমিক স্কুলগুলো বছরে মাত্র চার মাস খোলা থাকতো আর সেখানে উপস্থিতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের কোনো জবাবদিহি করতে হতো না। উচ্চ বিদ্যালয়ও ছিল খুবই কম। সারাটা রাজ্যে মাত্র একশোটার মতো উচ্চ বিদ্যালয় ছিল যেগুলোর বেশির ভাগেই আবার দুই-তিন বছরের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। হিলের জন্মের বিশ বছর পরেও পুরো ভার্জিনিয়াতে মাত্র দশটা চার-বছরের শিক্ষা ব্যবস্থাওয়ালা উচ্চ বিদ্যালয় ছিল। ঐ পরিস্থিতি থেকে নিজেকে সরিয়ে এনে সাফল্য অর্জন করা এবং পৃথিবী জুড়ে কয়েক লক্ষ মানুষকে প্র ভাবিত করা, অনুপ্রাণিত করা, সত্যিই প্র শংসার দাবি রাখে। হিল প্রায়ই শৈশবকালের স্মৃতিগুলো তার লেখা আর্টিক্যাল, বই অথবা বক্তৃতায় স্মরণ করে ন। তার স্মৃতিচারণগুলো বেশিরভাগই অত্যন্ত দুখঃজনক ভার্জিনিয়ান ওয়াইজ থেকে দুই বছরের উচ্চ বিদ্যালয় শেষ করে হিল একজন এক্সিকিউটিভ হিসেবে পরিচিতি পেলেন। এরপর তাজওয়ালের কাছে একটা বিজনেস স্কুলে দুই বছরের কোর্স নিয়ে সেক্রেটারি চাকরির জন্য ভর্তি হলেন। এটা তাকে পরবর্তীতে ব্যবসায়িক দুনিয়ায় যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। দক্ষিণ-পশ্চিম ভার্জিনিয়া পাহাড়ে সর্বোচ্চ সফল একজন ব্যক্তির সাথে কাজ করার জন্য হিল আবেদন করলেন। এ সম্পর্কে হিল জানান, আবেদনের প্রেক্ষিতে চাকরিদাতা তাকে একজন শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজ করার অনুমতি দেন। রুফুস আয়াস একজন ধনী এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক সফল জেনারেল। তিনি ছিলেন নেপোলিয়ানের নতুন চাকরিদাতা। কেন নেপোলিয়ন হিল দারিদ্র তা এবং অজ্ঞতায় জর্জরিত থেকেও জেনারেল আয়ার্সে র সাথে কাজ করতে চেয়েছিলেন, সেটা বোঝা খুব সহজ। রোড টু সাকসেস ১১ ১২ রোড টু সাকসেস বিজনেস কলেজে কোর্স শেষ করার পর নেপোলিয়ান আয়ার্সকে লিখেছিলেন, “আমি মাত্র বিজনেস স্কুল শেষ করেছি। সে হিসেবে আপনার সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করার মতো যথেষ্ট যোগ্যতা আমার হয়েছে। এই পদটা নিয়ে আমি কিছুটা উদ্বিগ্নও বটে...কারণ এক্ষেত্রে আমার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। আমি জানি, আপনার সাথে কাজ করাটা আপনার চেয়েও আমার জন্য বেশি জরুরি হিসেবে বিবেচিত হবে। আর এ জন্যই আমার যোগ্যতাসম্পন্ন বেতনে আপনার সাথে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছি...। আপনার বিবেচনায় ন্যায্য হলে যেকোনো চার্জ আপনি করতে পারেন, যেটা তিন মাস শেষে আমার বেতন হিসেবে গণ্য হবে। যে টাকাটা আমাকে বেতন হিসেবে দেয়া হবে সেটা আমার আয় করার শুরু থেকেই কর্তন যাবে।” কাজে আসতেন সবার আগে আর ফিরতেন সবার পরেÑ এমন তরুণ যুবকব নেপোলিয়ান হিলকে আয়ার্স চাকরিতে নিলেন। হিলকে “যতটা বেতন দেয়া হতো তার চেয়ে বেশি সেবা দিতেন।” আর এই অতিরিক্ত পথ যাওয়াটাই হলো হিলের সফল হওয়ার প্র ধান চাবিকাঠি। সেই সময় আয়ার্সের এমন অবস্থা ছিল যেখানে হিল ভালোভাবেই তার সেবা করতে পারে, তখন তিনি এমনভাবে কাজ শুরু করেন যেটা তাদেরকে সফলতার দিকে নিয়ে যায়। তরুণ আয়ার্স মিত্রবাহিনীর হয়ে গৃহযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যুদ্ধের পরে এক স্টোরে কাজ করার সময় তিনি আইন নিয়ে পড়াশুনা করেন। এর ফলশ্রুতিতে ভার্জিনিয়া রাজ্যের এটর্নি জেনারেল হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন এবং একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি ব্যাংকগুলোকে সাহায্য করতেন এবং কয়লা খনি পরিচালনা করা ছাড়াও অন্যান্য ব্যবসার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আয়ার্সের জীবনকাহিনী থেকেই হিল আইন বিষয়ে পড়ে এটর্নি হওয়ার ধারণাটা পান। হিল তার ভাই ভাইভিয়ানকে জর্জ টাউন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে রাজি করান যেখানে থেকে তিনি লেখালেখি করে তাদের দুজনেরই ভরণপোষণ চালিয়ে নিতে পারেন। যে তথ্য হিল জোগাড় করেন সেটা তার জীবনে লেখালেখি এবং তার ব্যক্তিগত অর্জন সম্পর্কে বক্তৃতা দেয়ার দিকে পরিচালনা করে। হিলের ব্যক্তিগত আবিষ্কারগুলো ১৯২৮ সালে আই খ-ে ল’ অব সাকসেস এবং নিজেকে সাহায্য করা নিয়ে যে সব বই প্রকাশিত সেগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ কপি বিক্রির রেকর্ড বই থিংক এন্ড গ্রো রিচ্-এ ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয়। আপনি এখন যে বইটি পড়তে যাচ্ছেন হিলের প্রকাশিত প্রথম বইয়ের আগের বইগুলোর মধ্যে এই বইটি আপনার সাফল্যের জন্য মহা মূল্যবান দিকনির্দেশনাবলি দেখাবে। ১৯০৮ সালে হিল কর্নে গীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তার প্রকাশিত প্রথম বইয়েরও বিশ বছর পূর্বে। হিল বব টেইলর’স ম্যাগাজিনে নিজের চাকরি স্থায়ী করে নিয়েছিলেন। ১৯০৮ সালে হিল নিউইয়র্কে এন্ড্রু কার্নেগীর চৌষট্টি রুমের একটা ম্যানশনে ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য আবেদনপত্র পাঠিয়েছিলেন। কার্নেগীকে আমেরিকায় খুবই কম শিক্ষিত অবস্থায় আসতে হয়েছিল। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে কার্নে গী কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কোটিপতি হয়েছিলেন। ইউ. এস. স্টিলের কর্ণধার হিসেবে হিল যখন কার্নেগীর সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন তখন তার বয়স চুয়াত্তর বছর। ১৯১৯ সালে মৃত্যুর সময় ইউ.এস স্টিল থেকে আয়ের ৩৫০ মিলিয়ন ডলার কার্নেগীকে রেখে চলে যেতে হয়েছিল। কার্নেগী তার অর্জনের নীতিগুলো নিয়ে হিলের সাথে কথা বলতেন। আড্ডা শেষ হওয়ার আগে কার্নেগী হিলকে তার ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতেন এবং মহান নেতাদের জীবনী পড়ার জন্য এবং এর মাধ্যমে তার আবিষ্কারগুলোকে একটা নীতির আলোকে সংকলন করতে যাতে করে মানুষ নিজেরাই নিজেদেরকে সাহায্য করতে পার এবং নিজেদের স্বপ্ন সম্পর্কে জানতে পারে। কার্নেগী তখনকার সময়ের বিখ্যাত নেতাদের মধ্যে ডন ডি. রকফেলার, টমাস এডিসন, হেনরি ফোর্ড এবং জর্জ ইস্টম্যানের সম্পর্কে হিলকে ভূমিকাস্বরূপ কিছুটা ইঙ্গিত করে গেছেন। কেন হিলের কাজগুলো পৃথিবীতে এতটা জনপ্রিয় এবং আত্মনির্ভরশীলতার আন্দোলন বর্তমানেও কেন এতটা জনপ্রিয় যেমনটা পৃথিবীর ইতিহাসে আর কেউ পারেনি আপনি খুব তাড়াতাড়ি তা বুঝতে পারবেন।
আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করা অলিভার নেপোলিয়ন হিল আত্মোন্নয়নধর্মী রচনা লেখকদের মাঝে প্রথমদিককার একজন। ব্যক্তিগত উন্নয়ন ও সফলতা লাভের বিভিন্ন দিক লেখনীতে তুলে এনে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সফল আত্মোন্নয়নমূলক লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে হিলের। নেপোলিয়ন হিলের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের সাউথইস্ট ভার্জিনিয়ায় ২৬ অক্টোবর, ১৮৮৩ সালে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে শেষ পর্যন্ত ল'স্কুলের পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি তিনি। এর আগে থেকেই যুক্ত ছিলেন সাংবাদিকতার সাথে, সেই ১৩ বছর বয়স থেকে। ১৯০৮ সালে এন্ড্রু কার্নেগীর সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে হিলের জীবনে আসে বিশাল পালাবদল। তখনকার সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী শিল্পপতি কার্নেগী তাকে পরামর্শ দেন ধনী ও সফল ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিতে ও তাদের সাফল্যের সূত্র সম্পর্কে জানতে। এরপর তিনি বিশ্ববিখ্যাত সফল ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু করেন। এই তালিকায় আছেন হেনরি ফোর্ড, আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলসহ আরো অনেকে। এমন ৪৫টি সাক্ষাৎকারের লব্ধ অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি প্রকাশ করেন তাঁর প্রথম রচনা 'দ্য ল অব সাকসেস'। এই বইয়ে তিনি সাফল্যের সূত্রকে ব্যখ্যা করেছেন গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, পুঁজিবাদের সমন্বয়ে মূর্ত দর্শন দিয়ে। নেপোলিয়ন হিল এর বই সমূহ সাফল্যগাঁথার চেয়ে সাফল্যের পেছনের সূত্র সহজীকরণের পাথেয় হিসেবে অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিখ্যাত এই লেখকের চরিত্রের কিছু রহস্যময় বৈশিষ্ট্য মানুষকে ভাবিয়েছেও বটে। তিনি দাবি করতেন, আত্মাদের সাথে তাঁর যোগাযোগ আছে, তাঁকে দেয় আধ্যাত্মিক জ্ঞান, সাফল্যের মন্ত্র। হিল এই বিষয়টি তাঁর ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত বই 'গ্রো রিচ(!) উইথ পিস অব মাইন্ড' এ খোলাখুলিভাবে বর্ণনা করেছেন। বর্তমানে তাঁর জীবনের অজানা কিছু অধ্যায় উঠে এসেছে গবেষকদের চোখে। তবে নেপোলিয়ন হিল এর বই সমগ্র বিতর্কিত ব্যক্তিজীবনের প্রভাবেও জনপ্রিয়তা হারায়নি। তাঁর রচিত 'থিংক এন্ড গ্রো রিচ' সর্বকালের সেরা আত্মোন্নয়নমূলক দশটি বই এর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত নেপোলিয়ন হিল এর বই সমূহ হলো 'অ্যাটিটিউড মেন্টাল পজিটিভা', 'দ্য মাস্টার কি টু রিচেস', 'সাকসেস হ্যাবিটস' ইত্যাদি। বিতর্কিত চরিত্রের এই লেখক ১৯৭০ সালের ৮ নভেম্বর বেশ রহস্যজনকভাবে মারা যান। ধারণা করা হয়, তিনি পারকিনসন্স সিন্ড্রোমে ভুগছিলেন।