যেসব কাহিনি আমি এই বইটাতে বিবৃত করেছি, হিসেব-নিকেশ তারিখ দিয়ে কিন্তু সেগুলোকে কণ্টকাকীর্ণ করিনি। কারণ তাহলে পুরো ব্যাপারটাতে একঘেয়েমি এসে যাবে। এবং মূলত তা হয়ে দাঁড়াবে রক্তপিপাসু বাঘগুলোর দিনলিপি। এখানে আমি আমার শিকারের দিনগুলোর সঙ্গে প্রকৃতির পরিচয় দিতে চেষ্টা করেছি। সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছি বাঘগুলোর দ্বারা সংঘটিত দৈনন্দিন সুখ-দুঃখের কাহিনি। বাঘগুলোর কাহিনি বলার পেছনে দু’টো উদ্দেশ্য কাজ করেছে। প্রথমত, খুব কম লোকের পক্ষেই প্রকৃতি আর তার জন্তু-জানোয়ার এবং রকমারি পাখির জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানার সুযোগ অপরিমিত। উপরন্তু, সীমাবদ্ধ এই জঙ্গলে প্রতি বছর তারা নির্মূল হতে চলেছে। আমি আজকের সভ্যতার নাগপাশে বাঁধা সেইসব বাঘের কাহিনি বলতে চেয়েছি, যতদিন না পর্যন্ত সে মানুষের দ্বারা বিপথগামী হয়েছে, ততদিন পর্যন্ত সে তার সহজ, সরল, সুন্দর এবং স্বাভাবিক চরিত্র নিয়ে আপন বন-রাজ্যে বিচরণ করেছে। বাঘের দ্বারা সংঘটিত পরবর্তী অপরাধগুলোর জন্য বাঘকে দায়ী করা অন্যায়। কারণ পরিবর্তিত পরিবেশ তার নিজস্ব জগৎ কেড়ে নিয়ে তাকে পঙ্গু করে দিয়েছে। প্রাণীজগতের মধ্যে প্রতিহিংসার যে প্রবৃত্তি কাজ করে, সেটাই হয়তো বা এর জন্য দায়ী।
কেনেথ এন্ডারসন (১৯১০ - ১৯৭৪) একজন প্রখ্যাত ব্রিটিশ শিকারি ও লেখক। তিনি দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন বনে দীর্ঘকাল ধরে বহু মানুষখেকো বাঘ ও চিতা শিকার করে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে রয়েছেন। দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন বনে দীর্ঘকাল শিকারের অভিজ্ঞতার আলোকে এন্ডারসন শিকার ও এডভেঞ্চার বিষয়ক বহু গ্রন্থও লিখেছেন।