সাম্রাজ্য পদবাচ্যটি বাংলাদেশের শহর—গ্রাম সর্বত্রই অতি সুপরিচিত। গ্রামের অশিক্ষিত মানুষদের অনেকেও সাম্রাজ্য, সম্রাট এবং রাজবংশসমূহের অনেক ইতিহাস—ঐতিহ্য নিয়ে নানা রকম গল্পের অবতারণা করে থাকেন। তাঁরা বংশ পরম্পরায় মুরব্বিদের কাছে শুনে শুনে এসব গল্প ও ঘটনার কথা রপ্ত করেছেন। তাছাড়া ১৯৬০—এর দশক পর্যন্ত বাংলাদেশে পুঁথি ছিল ঐতিহাসিক ঘটনাবলি জানার প্রধান উৎস। স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক আঙিনায় কোনোকিছু ঘটলেই অল্পস্বল্প লেখাপড়া জানা পুঁথি লেখকেরা ছড়ার ছন্দে ছন্দে পুঁথি লিখে ফেলতেন। নিউজপ্রিন্টের কাগজে মুদ্রিত স্বল্পমূল্যের এ সকল পুঁথি হাটে—বাজারে দেদার বিক্রি হতো। অতঃপর বিকালে অথবা রাতে গ্রামের পুঁথিপাঠে অভ্যস্ত একজন সুর করে পুঁথি পড়তেন। অন্যেরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো পুঁথি পাঠ শুনতেন। পরে শ্রোতাদের কেউ কেউ পুঁথি পাঠ থেকে শোনা ঘটনা বাড়িয়ে প্রচার করতেন। আর এভাবে মানুষ সাম্রাজ্যের কথা জানতে পারত। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে প্রথম ক্যাবল টিভি চালু হয়। ওই বছর বাংলাদেশে সিএনএন সম্প্রচার শুরু হয়। সিএনএন ছিল বাংলাদেশে চালু হওয়া প্রথম বেসরকারি চ্যানেল। তখন থেকে এ দেশের মানুষ ক্যাবল টিভির মাধ্যমে অতি সহজে পৃথিবীর নানা প্রান্তের এবং নানা বিষয়ের তথ্য—উপাত্ত জানতে পারছে। ক্যাবল টিভি তথ্য আদান—প্রদানের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এখন সাম্রাজ্য নেই। তবে অতীতের সাম্রাজ্য এবং নামিদামি সম্রাটদের কথা এখনো গ্রামগঞ্জসহ সর্বত্রই আলোচনা হয়। সাম্রাজ্য ও সম্রাটদের নানা বিষয় মানব মনে বিস্ময়, চিন্তা, বেদনা অথবা উল্লাসের জন্ম দেয়। সাম্রাজ্য এবং সম্রাটদের কথা জানতে এখনো মানুষের মন আনচান করে। আকবর দ্য গ্রেট, সুলতান সুলেমান এবং সোর্ড অব টিপু সুলতান নামের সিরিয়ালসমূহ এখনো মানুষকে ঘরে টানে এবং তাদের হৃদয় কাড়ে। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সমাজ এবং রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে তাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। তখন আরও জানার জন্য তারা ইন্টারনেটের শরণাপন্ন হয়। ইন্টারনেট এখন মানুষের মনের খোরাক জোগায়। ২০১৭—১৮ খ্রিস্টাব্দে দীপ্ত টিভিতে প্রচারিত অটোমেন ‘সুলতান সুলেমান’ শীর্ষক সিরিয়াল বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। অনেক দর্শক নেশার মতো এ সিরিয়ালটি দেখে থাকে। এতেও সাম্রাজ্যিক ইতিহাসের প্রতি মানুষের এক ধরনের আগ্রহ এবং প্রীতির আভাস পাওয়া যায়। এতে এটিও উপলব্ধি করা যায় যে, ইতিহাস অমর। ইতিহাসের প্রয়োজন কখনো ফুরিয়ে যায় না। হাজার হাজার বছর পরেও ইতিহাস মানুষের হৃদয়কে নাড়া দেয়।