বর্তমান শতাব্দীর রাজনীতি ও মানব অস্তিত্ব অনুধাবনের জন্য জর্জিও আগামবেনের একটি উল্লেখযোগ্য বই। জৈব রাজনীতির (বায়ো পলিটিক্স) নতুন ধারণার জন্যও বইটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগামবেন বইটিতে এই সত্য তুলে ধরেছেন যে, মানুষ কোনো মূল্যে তার ভেতরে যে প্রাণ আছে কেবল তা নিয়ে বাঁচতে পারে না। প্রচলিত রাজনৈতিক কাঠামোর বিন্যাসটাই এমন যে, এই কাঠামোর মধ্যে থেকে মানুষ নির্যাতনের শিকারে পরিণত হয়। তার সব শ্রম অর্থহীন হয়ে যায় এবং জীবন মূল্যহীন হয়ে পড়ে। নতুন চিন্তাধারার সূত্রপাত ঘটিয়ে এই বইয়ে আগামবেন বিষয়টিকে যেমন প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন তেমনি বর্ণনা করেছেন কীভাবে সার্বভৌম ক্ষমতা ও আধিপত্যের ফলে মানুষ বিপন্নতার শিকার হয়। দেখিয়েছেন রাষ্ট্র কীভাবে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে পৃথকীকরণ-বিচ্ছিন্নকরণ-প্রান্তিকীরণ-বহিষ্করণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংকটাপন্ন জীবন-যাপনে বাধ্য করে। জর্জিও আগামবেনের মতে এক ধরনের গোপন সংযোগ ঘটে সার্বভৌম ক্ষমতা ও জৈব রাজনীতির মধ্যে যা রাষ্ট্রীয় সার্বভৌম ক্ষমতার ব্যতিক্রমী ভিত্তি হিসেবে কাজ করে এবং রাষ্ট্রের উৎপত্তি লগ্ন থেকে জৈব রাজনীতি ক্ষমতা কাঠামোতে অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়। ‘হোমো সাকার' (পবিত্র মানব) একটি রূপক-যা আইনি প্রক্রিয়ায় নির্মাণ করা হয়। সে-ই পবিত্র মানব যাকে অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হয় এবং যার মৃত্যুবরণ করাটাকেই রাষ্ট্র শ্রেয় বলে ধার্য করে। তাকে যে কেউ হত্যা করতে পারে এবং হত্যাকারীকে সে জন্য দোষী সাব্যস্ত হতে হয় না। বইটিতে দেখানো হয়েছে কীভাবে আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার অন্তর্ভূক্ত যে কেউ সার্বভৌম ক্ষমতা দ্বারা বহিষ্কৃত ও নির্বাসিত অবস্থায় মূল্যহীন জীবে পরিণত হয় । জৈব রাজনীতি কীভাবে ‘মূল্যহীন জীবনকে ক্রমাগত মৃত্যুর রাজনীতি'র দিকে ধাবিত করে। এই বই কেবল এসব বিষয়ে অবিরত প্রশ্ন উত্থাপনের জন্যেই সুযোগ করে দেয় না, সার্বভৌম ক্ষমতা-বলয় থেকে মানবজীবনের মুক্তির জন্য 'আগামীর রাজনীতি’ কেমন হবে তারও দিক নির্দেশনা দেয়।