ইংরেজদের তাড়িয়ে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে যে স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছিলাম, প্রকৃতপক্ষে আমরা বাঙালিরা তা মেনে নিতে পারিনি। পদে পদে স্বাধীনতার সুফল ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। ৪৭-এর দেশভাগ আমাদের প্রত্যাশিত অর্জন ছিল না। ৭১-এর ত্রিশলক্ষ শহিদের রক্ত এবং দুইলক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতায় আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। ৫২-র ভাষা আন্দোলন, ৫৪-র যুক্তফ্রন্ট, ৬৬-র ছয় দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন সর্বপরি ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও লোমহর্ষক বীরত্বগাঁথা ঘটনা হয়তো কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে যদি না লিপিবদ্ধ করা হয়। ৫২, ৬৬, ৬৯, ৭০, ৭১-এর দিনগুলো ছিল স্লোগান, মিছিল আর সশস্ত্র সংগ্রামের জনপ্রিয় অধ্যায়। এই বইটা লিখতে আমার অনেক মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। আমি চেয়েছি, বইটি যেন তথ্যনির্ভর ও বস্তুনিষ্ঠ হয়। যুদ্ধে আমার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ, আমার দেখা ও সীমিত জানাশোনা এবং কিছু পড়াশোনার মধ্যে লেখাটা রাখার চেষ্টা করেছি। তারপরও বিভিন্ন এলাকার মুক্তিযুদ্ধাদের সাথে কথা বলে অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি আমরা পরশ্রীকাতর, ঈর্ষা-হিংসা থেকে আজও মুক্ত হতে পারিনি। অর্থাৎ কেউ কারও থেকে কম না। আসলে সবাই তো জাতির গর্বিত সন্তান। সফলতার কথা-ই সবাই নিজেকে নিয়ে বলে। আমি চেষ্টা করেছি। আগ্রহও ছিল অনেক। এই লেখায় হয়তো অনিচ্ছাকৃত বা ভুলে যাবার কারণে কোনো ঘটনা থেকে কারো নাম বাদ পড়তে পারে, এজন্য আমি দুঃখিত। পরবর্তী সংস্করণে তা সংযোজনের ইচ্ছা আছে। আমি রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞানের একজন ছাত্র। সমাজ পরিবর্তনের একজন সৈনিক। ৭১-এর রণাঙ্গনের একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি লেখক নই। তা সত্ত্বেও বইটি লেখার দুঃসাহস করেছি। অনেক ভুল-ত্রুটির পরেও বইটি প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছি। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ৭০-এর কাছাকাছি। আমরা আমাদের গৌরবের দিনগুলো ভুলতে বসেছি। তাই আগামী প্রজন্মের জন্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের ইতিহাসের অংশবিশেষ লিখে গেলাম। আশাকরি দেশ এবং দেশের পতাকা যতদিন থাকবে দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের এবং মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবের দিনগুলো শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।