সন্ধ্যে হলেই বাড়িতে অন্ধকার নামে। সব বাড়িতেই নামে। এ বাড়িতে একটু বেশি। আবার সন্ধ্যায় আলোও জ্বলে অন্যবাড়ির চেয়ে বেশি। সারারাত আলো জ্বলে- মিটিমিটি। বিশাল দালান বাড়ি। পুরনো। একপাশে কিছু ইট ক্ষয়ে গেছে। তাতে কী! প্রচণ্ড শক্তিতে দাঁড়িয়ে আছে দোতলা দালানটি। দাঁড়িয়ে থাকবে আরো অনেকদিন। আশেপাশের দু'দশ গাঁয়ে এরকম দালান নেই। তবে অবস্থাপন্ন বাড়িতে চৌচালা দোতলা ঘর আছে। নূরুল ইসলাম একটি ম্যাচবাতি নিয়ে সব ঘরে এক এক করে হারিকেনে আলো জ্বালায়। ডিউটি বলে কথা। মাঝখানের ঘরে আলো জ্বালিয়ে বাইরের ঘরে আসে। পেঁচার ক্রু... ক্রু... আর ওয়্যার্ড... ওঁয়্যার্ড... শব্দ। নূরুল ইসলাম কান খাড়া করে। শতসহস্র ঝিঁঝি পোকার ঝিঁ ঝিঁ শব্দ ভেদ করে ওই শব্দ নূরুলের কানে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। নূরুল বিরক্ত হয় না। এই পেঁচাগুলোকে লক্ষ্মীপেঁচা বলেই জানে নূরুল ইসলাম। এ বাড়িরই কোনো এক গাছে ওদের বাস। ওদের তাড়াতে চায় না ও। পেঁচার ডাক শুনে হারিকেনে হাত বাড়ায়। আলো জ্বালাতে যায়। দরজায় হঠাৎ খঙ্খট্ শব্দ। নূরুল ইসলাম মাথা তোলে, কানখাড়া করে। এরকম ভর-সন্ধ্যেবেলা এ বাড়িতে কারো আসার নিয়ম নেই। আবার খট্ খট্ শব্দ। একাত্তরের সেপ্টেম্বরের বিশ তারিখের কথা মনে পড়ে নূরুল ইসলামের। সেদিনের ঠিক এসময়ে খট্ খট্ শব্দে আলো জ্বালাতে পারেনি ও। দরজা খুলে দিয়েছিল। শুকনো ঝরাপাতার ওপর কোনো পা পড়লে ও বলে দিতে পারে এটা বিড়ালের পা নাকি মানুষের। কিন্তু সেদিনের দরজার খটখট্ শব্দকে আঁচ করতে পারেনি। হয়ত আঁচ করতে পেরেছিল। আর আঁচ করতে পেরেছিল বলেই দরজা ভাঙার আগেই খুলে দিয়েছিল। দরজা