বিগত শতাব্দীগুলিতে খ্রিস্টীয় ধর্মের অধিকাংশ অনুসারী অন্য ধর্মালম্বীগণের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তাভাবনা করতে তেমন কোনো রকম ইচ্ছুক ছিলেন না। লিপিবদ্ধ মানব ইতিহাস থেকে দেখা যায় যে, রাজনীতির সঙ্গে ধর্মীয় সম্পৃক্ততা গভীরভাবে সম্বন্ধিত ছিল- এমনকি রাষ্ট্রধর্মের প্রতি আনুগত্য নাগরিকগণের দায়িত্ব বলে পরিগণিত হতো এবং রাষ্ট্রধর্ম পরিত্যাগ রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে বিবেচিত হতো। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, বিশেষত:, যখন খ্রিস্টধর্ম ও ইসলাম বিবেচ্য বিষয় ছিল এবং যে ধর্মবিশ্বাস ছিল শত্রুপক্ষের ও ভ্রান্ত বলে বিবেচিত - তখন এ বিষয়ে তাদের কোনো রকম আগ্রহ থাকার প্রয়োজনই বা কি? নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা আধুনিক কালের একটি কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নসূচক এবং এটিকে ক্রমশঃই অধিক হারে মানবাধিকার হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।তবে, অতীতে খ্রিস্টধর্মের অনুসারী ও মুসলিমগণের মধ্যে যে নিন্দাবাদ বিনিময় হয়েছে- অধিকাংশ আধুনিক পশ্চিমার কাছে তা কিছুটা বিস্ময়কর ও অভাবিতপূর্ব প্রতীয়মান হবে। উপরোক্ত প্রেক্ষাপটে আমাদের আলোচ্য পুস্তকটি মূল্যায়িত হওয়া দরকার। বইটি লেখকের ইসলামের প্রতি এবং যিনি মানুষের জন্য কুরআন এনেছেন, ইসলামের সেই নবী মুহাম্মদ (স) এর প্রতি গভীর অনুরাগ থেকে অস্তিত্ব লাভ করেছে। বহুকাল ধরে এই অসামান্য মানুষটির উপর যে স্তূপীকৃত কুৎসা, নিন্দাবাদ ও অমর্যাদা নিক্ষেপ করা হয়েছে এটি তার প্রতিবাদ। এই পুস্তকটি পাঠকের দৃষ্টিতে এই মহামানবের একটি অন্যবিধ প্রতিকৃতি সহজলভ্য করেছে- যাতে চিত্রিত হয়েছে এক মহানায়কের প্রতিচ্ছবি, যিনি তাঁর নেতৃত্বের মাধ্যমে মানবাত্মা ও মানবসমাজকে এমনভাবে গ্রন্থিত ও উদ্বুদ্ধ করেছেন যে, এর ফলশ্রুতিতে আমরা আমাদের আজকের এই বিশ্ব পেয়েছি। লেখক এই বইটিতে বহু সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ ও উপস্থাপন করেছেন যা হৃদয়গ্রাহী- যাতে আছে মুসলিম, অমুসলিম বহু মনীষীর প্রসংশা যেখানে তাঁরা মুহাম্মদ (স)-এর অসামান্য অর্জনগুলোর জন্য তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রশংসা নিবেদন করেছেন। এই বইয়ে সমূহ প্রমাণাদি উপস্থাপিত হয়েছে, যা থেকে দেখা যায় যে, বহু খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী এখন উপলব্ধি করছেন যে, তাদের ধর্মবিশ্বাস তাদেরকে মুহাম্মদ একজন ভন্ড- (নাউজুবিল্লাহ) নবী কিংবা প্রতারক (নাউজুবিল্লাহ) ছিলেন এ কথা ভাবতে শেখায় না। এটিও তাঁরা অনুধাবন করছেন যে, একজন গোঁড়া খ্রিস্টধর্মাবলম্বীর ধর্মবিশ্বাস এবং ব্যক্তি মুহাম্মদ (স) ও তাঁর গুণাবলির স্বীকৃতি প্রদানের ভেতর কোনো বিরোধ নেই। এই বই প্রাচ্যবিদ, পন্ডিতগণ, খ্রিস্টান মিনিস্টার, রাজনীতিবিদ, ইহুদি ধর্মবিশ্বাসী, নাস্তিক, উচ্চ শিক্ষিত বর্তমান ও ইতিহাস থেকে বহু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বের মিলনমেলা, যাঁরা নবী মুহাম্মদ সম্পর্কে তাঁদের নিজস্ব ভাবনা ও প্রসংশা লিপিবদ্ধ করেছেন। এই পুস্তকের পত্রপুঞ্জ তাই এই বিষয়টির সাক্ষ্য দেয় যে, বর্তমানে মানবতা যদিও কঠিন এক সময় পার করছে, তথাপি মানুষের সৌহার্দ্য ও উদারতা নিঃশেষ হয়ে যায়নি- এবং এটিই আমাদের সকলের জন্য সুন্দর আগামীর বার্তাবহ।
Title
মুহাম্মদ (স): অমুসলিম বিশ্বমনিষীর ১০০১ প্রশংসা ও মূল্যায়ন