বাংলাদেশকে কবি বলেছেন সকল দেশের রানি। একই দেশে সকল প্রকার প্রাকৃতিক উপাদান বিশ্বে বিরল হলেও বাংলাদেশে এটি অবারিত। সমুদ্র, পাহাড়, নদী-হাওড়-বাঁওড়-বিল, সমভূমি, বিশাল সবুজ প্রান্তর। বিশ্বের দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত থাকতেও পর্যটনের প্রত্যাশিত বিকাশ ঘটেনি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্টকে সেভাবে তুলে ধরতে পারিনি, যা করলে সারা বিশ্ব থেকে পর্যটকরা ছুটে আসতেন এর রূপসুধা উপভোগে। যদিও এর বাইরে কিশোরগঞ্জ হাওড়, সিলেটের রাতারগুল, মুন্সিগঞ্জ জেলার মৈনটঘাট, নোয়াখালীর হাতিয়া-সন্দ্বীপ ভ্রমণে যুক্ত হয়েছে, তবে ব্যাপকভাবে নয়। অথচ প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় বিবেচনায় পুরো বাংলাদেশকেই ভ্রমণের আওতায় আনা যায়। দেশের উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চলে রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক নিদর্শন, যা অনায়াসে ভ্রমণ করা যায়। শিক্ষাবিদ, কবি, লেখক ও ভ্রমণবিশারদ ড. ডি. এম. ফিরোজ শাহর আলোচ্য গ্রন্থ ‘গারো পাহাড়ের খোঁজে’ পাঠকদের যেমন নিয়ে গেছে ঘোষগাঁও, গাবরাখালী, তেমনি ইটনা হাওড়-খালিয়াজুড়ি দিয়ে সাচনাবন্দর হয়ে সুনামগঞ্জ। হাওড়ের বিশাল জলরাশি যেমন সবাইকে বিমোহিত ওমুগ্ধ করবে, তেমনি দেওয়ানগঞ্জ থেকে রাজীবপুর-রৌমারী গিয়ে দেখাবে অন্য বাংলাদেশকে। নোয়াখালীর চর আলোকজান্ডার দিয়ে ভোলার চরফ্যাশন, চর কুকড়িমুকড়িতে পাওয়া যায় সংগ্রামী মানুষের জীবন। সাতক্ষীরায় সুন্দরবনের মানুষ আর পদ্মার নদীভাঙনের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে যায় বহুগুণ। ২১টি ভিন্ন স্বাদের ভ্রমণকাহিনি এক মলাটে পাওয়া যাবে ‘গারো পাহাড়ের খোঁজে’ গ্রন্থে, যা পাঠককে দেবে অনাবিল আনন্দ আর তৃপ্তি।
ড. ডি. এম. ফিরোজ শাহ্, জন্ম ০১ আগস্ট ১৯৬৯, কুতুবপুর, শিবচর, মাদারীপুরে। স্বনামধন্য চিকিৎসক পিতা ডা. মমিন উদ্দিন আহমেদ এবং মা রহিমা বেগমের ষষ্ঠ সন্তান তিনি। পেশা অধ্যাপনা। বর্তমানে তিনি সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন। একজন শিক্ষক প্রশিক্ষক হিসেবে দেশব্যাপী সুখ্যাতি থাকলেও ভালো লাগে নজরুলের দুরন্তপনা, শরৎচন্দ্রের বোহেমিয়ান জীবন, বুদ্ধদেবের নিসর্গ আর সৈয়দ মুজতবা আলীর দেশ ভ্রমণ। এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বহু দেশসহ বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছেন। মধ্যরাতের সুনসান নিরবতা আকর্ষণ করে প্রবলভাবে, খরতাপে ভিজতে ভালো লাগে, পাহাড়ের উচ্চতা আশা জাগায়, সমুদ্রের গভীরতা ভাবতে শেখায়। নদী-নারী-প্রকৃতি এ নিয়ে তাঁর কৃতি। মানব-মন, দ্বন্দ্ব, সংঘাত, প্রেম, ঈর্ষা আর আশা এ সবের প্রতি নিগূঢ় ভালোবাসা। নানা ধরনের রচনার সংখ্যা প্রায় ৪০টি। ১৯৯৬ সাল থেকে একাডেমিক গ্রন্থ রচনায় নিয়োজিত রয়েছেন। তাঁর বই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্বদ্যিালয় ও সরকারের টিকিউআই প্রকল্প কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। মিতা ট্রেডার্স থেকে প্রকাশিত বিএড কর্মসূচির আলোচিত বইসমূহ হলো- ভূগোল শিক্ষণ, মাধ্যমিক শিক্ষা, শিখন-শেখানো দক্ষতা ও কৌশল, শিক্ষায় গবেষণা ইত্যাদি। আগামী প্রকাশনী থেকে ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয় আলোচিত গল্পগ্রন্থ হৃদয়ে রক্তক্ষরণ এবং ২০০৭ সালে ইরাবতী। ২০১৯ সালে তাঁর আলোচিত ভ্রমণ কাহিনী ফিলিপাইন: রহস্যঘেরা এক মায়াবী দ্বীপরাষ্ট্র, ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাসংক্রান্ত কর্ম নিয়ে গবেষণামূলক গ্রন্থ বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন, ২০২১ সালে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ দশ রাজনীতিবিদ, ২০২২ সালে উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও গারো পাহাড়ের খোঁজে (ভ্রমণ কাহিনি) আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়।