ভাব বা চিন্তা কিংবা কল্পনার গড়ে উঠার কাজটা হয় ভাষার আশ্রয়ে, এমনকি কথায় বা ছাপার অক্ষরে সামনে আসার আগেও। এইভাবে দেখলে বুঝা যায় ভাব-চিন্তা-কল্পনার উপর ভাষার প্রভাব অস¦ীকার করার সুযোগ নাই। এ জন্য যে-ভাষায় আমাদের ভাবনা বা কল্পনার উড়াউড়ি যদি তার প্রকাশ সেই ভাষাতেই হয় তাহলে তার মধ্যে থাকে কথকের অকৃত্রিম আবেগ, আত্মার উম। কবি ওয়াহিদ রোকনের কবিতা পড়লে এই কথাগুলো প্রথমে মনে আসে আমার। শুরু থেকেই রোকন কেতাবি ভাষা বা তিরিশি কাব্যভাষা অস্বীকার করে আমাদের মান কথ্যভাষায় লিখছেন। তার ভাব, উপমা, রূপক প্রতীকের জায়গাজমিন বাঙালির দেশাত্মার জগত। এ জগত মূলত উত্তরউপনিবেশি বাঙালি মনের সচেতন শিল্পকুশলতার ফসল। বাংলা কবিতায় তিরিশের দশক যে বানোয়াট ক্ষয়, গ্লানি, দুঃখবোধ, বিবমিষার সঞ্চার করে দিয়েছিলো তাই চলে এসেছে আজ অবধি। রোকনের কবিতা অই কৃত্রিমতা থেকে মুক্ত। একান্ত নিজস্ব পরিপার্শে^র মধ্যে বেঁচে থাকা মানুষের আবেগ-উল্লাস সুখ দুঃখ- বঞ্চণা-প্রাপ্তির বয়ান অকৃত্রিম শিল্পিত মোড় নেয় রোকনের কথনে, আমাদের প্রতিদিনের মুখের ভাষায় সওয়ার হয়ে সহজেই জায়গা করে নেয় পাঠকের দিলের গভীরে। আবেগ আর ইশকের এক সুগভীর যুগলবন্দী যেন বা।