‘নেত্রকোণার নামকাহন’ ব্রহ্মপুত্রের পূর্বাঞ্চলের ইতিহাস। মগরা-কংস-ধনু-সোমেশ্বরী-ঘোড়াউতরা-উবদাখালীর পলিমাখা জনপদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বহুদর্শী অভিজ্ঞান এই গ্রন্থ। নামের ভেতর দিয়েই একটা ভূখণ্ডের জাত চেনা যায়। নামের সাথেই সংযুক্ত মানুষের সাংস্কৃতিক পরিচয়। মাটির স্বভাব, স্থানিক অনুভব ও ভাষা-যাপনের মাধ্যমেই একটা অঞ্চলের সাংস্কৃতির পরম্পরা, নিরবচ্ছিন্ন চিন্তাপ্রবাহ, বিশ্বাস ও ভাবুকতা গড়ে ওঠে। ব্রিটিশ উপনিবেশপূর্ব সহস্র বছরের সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির হিন্দু-মুসলমান কিংবা সুফি-বৈষ্ণব-বাউলের যে অকৃত্রিম বাঙালি সমাজজ্জসেই সামাজিক-সাংস্কৃতিক ভাবুকতার ইতিহাসটাই আঞ্চলিকতার প্রবাহে উঠে এসেছে এই গ্রন্থে। প্রতিটি গদ্যই একাডেমিক। কিন্তু চিন্তাকে সহজে পরিবেশন করার ক্ষমতায় মঈনউল ইসলামের গদ্য সহজ-সুন্দর। তিনি শুধু গদ্য লেখেন না, চিন্তা ও গদ্যসূত্রে হাজির করেন জনপদের মনন, প্রাকৃতানুভব, সাংস্কৃতিক পরিচয়। কীভাবে এখানকার সহজ ধর্মের সহজিয়াগণ আত্মাধিকার ও গোষ্ঠীস্বার্থে দ্রোহী ও লড়াকু হয়েছেন; গানের ভেতর ধর্ম ও সাধনাকে কীভাবে সমর্পণ করেছেন একেকজন সাধকজ্জতাই প্রশ্নভরা মন আর বিস্ময়ভরা চোখ নিয়ে সৌন্দর্যের পরিসর তৈরি করা হয়েছে একেকটি গদ্যে। লেখার মেজাজ কিংবা বিষয়ভিত্তিক বিন্যাসে ভাগ হয়েছে একেকটি অধ্যায়। আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসের সমান্তরালে স্থানিক ইতিহাসের ব্যাপারে যাঁদের আগ্রহ, বিশেষ করে লোকবাচন ও লোককথা, আখ্যান-উপাখ্যান-লোকগল্পের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বুনিত ও বয়ে চলা নৃবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের খোঁজে যাঁরা আছেনজ্জতাঁদের সমৃদ্ধ করবে এই গ্রন্থ। ‘জল’ নির্ভর যে মানবসভ্যতাজ্জসেই সভ্যতায় হাওরাঞ্চলের পানি, ভাববৈচিত্র্য, গান ও গীতলতাই মঈনউল ইসলামের সহজ গদ্যশৈলী।