শীতের রাইত, চারিদিকে ঘুটঘুইট্টা আন্ধার। পাঁচটা মাস পর বাপজান আমগোরে দেখতে আইছে। আমরা তিন ভাই বোইন হা কইরা চাইয়া আছি বাপজনের দিকে। কেমনে ঘাপুস ঘুপুস কইরা খাইতাছে বাপজান! না জানি কত্ত দিন কিছু খায় নাই। মায়ে কান্দে আর বাপজানরে শেষ চালুটুকু তুইলা দেয়! মরার খিদায় বেবাক খানা আমরা খাইয়া ফেলাইছি, মায়ে তাই গরম ভাত আর গাছের কুমড়ার ঝোল কইরা দিসে। বাপজনে তাই মাংসের চালুনের লাহান মজা কইরা খাইতাছে! বাপজান খায়, আর আমরার দিকে তাকাইয়া দেয় একটা হাসি। ছোড ভাইডা লাফ দিয়া হাতে তালি দিতে চায়, কিন্তু মায়ের কড়া আদেশ, একদম শব্দ করা যাইবো না। পাক বাহিনী জানলে বাপজানরে ধইরা নিয়া যাইবো। তবুও হটাৎ সব শব্দ ছাড়াইয়া বেদম ঠা ঠা ঠা শব্দে আকাশ বাতাস কাঁইপা উঠলো! আমি নিমেষেই দেখলাম বাপজনের হাসি, মায়ের কান্দোন, ছোড ভাইয়ের আনন্দ সব এক শব্দের আঘাতে থাইমা গেল! আবছা চোখে বোইনডার শইলডা কুত্তাগোর খানা হইতে দেখলাম। কিন্তু আমি এই উনপঞ্চাশ বছরেও রিকশার পেডেল মাইরা বাইচা আছি, বা়ইচা আছি স্বাধীন দেশে চিৎকার কইরা কইতে..... আমার বাপজান, মা, বোইন এই দেশের লাইগা জীবন দিসে। নিজের সুখ, সংসার, সম্ভ্রম সব বিসর্জন দিসে একটা মানচিত্রের লাইগা! তোমরা তাঁগো এই কুরবানী সম্মান করো! সম্মান করো! সম্মান করো!