যতই দিন যাচ্ছে, দেশের জন্মের ইতিহাস যেন শুধু সংখ্যা, সাল, তারিখ এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মতন বিশাল বিশাল পরিসংখ্যানে পরিণত হচ্ছে। কিন্তু এ তো আর রাজায় রাজায় যুদ্ধ ছিল না, এটা ছিল সাধারণ মানুষের মুক্তির জন্য যুদ্ধ, স্বাধীনতার যুদ্ধ। আবেগ তার প্রধান হাতিয়ার। সংখ্যার বেড়াজাল কী তাকে মাপতে পারে! এই বই কোনো সুসজ্জিত গল্প নয়, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ নয়, এ আমার বাবার চোখে ফিরে দেখা একাত্তর। ১৯ বছর বয়সী এক আবেগপ্রবণ যুবকের যুদ্ধ যাত্রার কথা। আমার মার অনুরোধে তিনি যুদ্ধের ৪২ বছর পর এটা ডায়রিতে লিখে গিয়েছেন। আর আমরা সেটা ছাপার অক্ষরে সংরক্ষণ করে রাখছি। বাবা বেশ স্বল্পভাষী মানুষ ছিলেন। বাবার খুবই ঘটনাবহুল জীবনের অল্প কিছু ছোট গল্প মাঝেসাঝে শুনেছি তাঁর মুখে, কিন্ত এখন ভাবতে গেলে মনে হয় কত কম জানি! এই লেখাটাও বাবাকে কত জোর করে লিখিয়েছিলেন মা! পার্কিনসন ডিজিজের কারণে বাবার শেষ সময়টা এতো কঠিন ছিল আর ডিমেনশিয়ার কারণে শেষসময়ে বাবা এত অন্যরকম ছিলেন যে সেই অল্প জানাগুলোও একদম স্মৃতির আড়ালে চলে গিয়েছিল। বাবাকে শেষসময়ের কষ্ট দিয়েই শুধু মনে পড়ে। এই লেখাটাই মাঝে মাঝে আমার পুরোনো অসম্ভব সাহসী, বীর, জীবনের চেয়ে বড় বাবাকে ফিরিয়ে আনে। বাবার এই স্মৃতিটুকু সংরক্ষণে, লেখাটা বই আকারে বাস্তবায়নের সাথে জড়িত সবার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে বইয়ের অলংকরণের জন্য নাজিউর রহমান ও মুহম্মদ ইরফানকে অশেষ ধন্যবাদ। শেষদিন পর্যন্ত বাবা অন্তর থেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। একদম শেষসময়ে ডিমেনশিয়ায় বাবা যখন বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন, সেসময়টা প্রায়ই বাবা যুদ্ধে ফিরে যেতেন। বলতেন আমার যুদ্ধে যেতে হবে।